হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা-সংস্কৃতি

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরএম সেলিম শাহী, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুর পাহাড়ি এলাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ও সংস্কৃতি। পাহাড়ে বসবাসরত হাজং, বানাই ও ডালুসহ চার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আর গারো, কোচ ভাষা কোনোমতে পরিবার পর্যন্ত টিকে আছে। নিজের ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকার বিশিষ্টজনরা। বিশেষ করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় লেখা বই থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের অভাবে সেগুলো পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ফলে তারা আধো আধো ভাষায় কথা বলতে পারলেও ওই ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারছে না। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। এ পাহাড়ি এলাকাসহ পুরো জেলায় গারো, হাজং, কোচ, বানাই ও ডালুসহ ৬ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তত ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব গোষ্ঠীর মানুষের আছে আলাদা আলাদা ভাষা, আছে নিজস্ব সংস্কৃতিও। নিজ ভাষায় কথা বলাসহ সামনে এগোতে চান তারা। কিন্তু চর্চা আর সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে তাদের মাতৃভাষা।

জানা যায়, ভারত সীমান্তঘেঁষা বানাইপাড়ায় বেশ কয়েকটি বানাই পরিবার বাস করলেও প্রায় হারিয়েই গেছে ডালু জাতিগোষ্ঠী। ভাষার সঙ্গে হুমকির মধ্যে তাদের সংস্কৃতিও। ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো রূপ না থাকায় হারাতে বসেছে এ দুটি জাতিগোষ্ঠীসহ চারটির ভাষা ও সংস্কৃতি।

গজনী এলাকার চাকনী কোচ বলেন, ‘স্কুল-কলেজে আর আমাগো ভাষা শিখায় না। তাই আমাগো পোলাপানরা আমাগো ভাষায় কথা বলতে চায় না। বাংলা ভাষায় কথা কয়। স্কুলছাত্র স্বপ্ন হাজং বলেন, আমাগো স্কুলে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা পড়ায়। আমাগো ভাষার বই দিছে, কিন্তু স্যার নাই।’

স্কুলশিক্ষিকা শান্তি রানী বলেন, ‘মান্দি ভাষায় কথা বললেও বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হয়। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাংলা ভাষা জানতাম না। স্কুলে যাওয়ার পর বাংলা ভাষা শিখেছি। স্কুলেও আমাদের ভাষা প্রয়োগ হয় না। এতে আমাদের ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে।’