ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাঁশ শিল্পকে আঁকড়েই চলে জীবন

বাঁশ শিল্পকে আঁকড়েই চলে জীবন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে থাকা বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনো জীবন ধারণ করছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধাপের হাটের অর্ধশতাধিক পরিবার। বাঁশ থেকে তৈরি ডালা, কুলা, চালুন, খইচালা, জালি, ঝাপনি, চাঙ্গারি, বাচ্চাদের ছোট কুলাসহ হরেক রকমের পণ্য হাটে হাটে বিক্রি করে নিজেদের যেমন বাঁচিয়ে রেখেছেন, ঠিক তেমনি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন পরিবারগুলো।

জানা যায়, অতীতে গ্রামে-গঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল অনেক। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। অতীতে বাঁশের তৈরি তৈজসপত্রই ছিল সংসারের মূল ভরসা। কিন্তু কালক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশ শিল্পে ভাটা পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ শিল্প।

কিন্তু পূর্ব পুরুষের ব্যবসাকে এখনো ধরে রেখেছেন জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার কিছু মানুষ। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধাপের হাট এলাকায় গ্রামের নারী পুরুষ মিলিয়ে তৈরি করছেন বাঁশের তৈজসপত্র।

বাঁশ শিল্পের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের পুরুষরা বিভিন্ন বাগান থেকে ভালো ও লম্বামানের বাঁশ সংগ্রহ করে। পরে সেই বাঁশ প্রথমে চেঁছে পণ্যের আকার অনুযায়ী কেটে নেয়। কেটে নেয়া অংশ থেকে বাঁশের পাতলা ও চিকন চাঁচ তৈরি করে তা দিয়ে ডালা, কুলা, চালুনসহ বিভিন্ন কিছু তৈরি করে। একজন কারিগর দিনে ৪ থেকে ৫টি বড় মাপের ডালি তৈরি করতে পারে। পাইকারদের কাছে এই ডালা বিক্রি করেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে। আর খোলা বাজারে এই ডালা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

ধাপেরহাট এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, বাঙালির ঐতিহ্য এসব পণ্য এখনো এলাকার ঘরে ঘরে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাঁশের তৈরি বাহারি পণ্যও বেচাকেনা হয়ে থাকে ভালো।

বাঁশ শিল্পের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা শুরু করছেন। প্রতি হাটে ৭-৮ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। এছাড়াও গ্রামে ফেরি করে বাঁশের তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করেন। তাতে তার ভালো আয় হয়। গড়ে মাসে তিনি ১ লাখ ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন।

হাটের আরেক ব্যবসায়ী মো. জাকারিয়া জানান, ধাপের হাটে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবসা করছেন। এখানে প্রতিটি পণ্য যেমন- প্রতি পিস ডালা বিক্রি হয় ৭০ টাকা, কুলা ১০০ টাকা, চালুন ৮০ টাকা, ডালি ১০০ টাকা, ঝাঁপি ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এই হাটে প্রচুর ক্রেতা আসেন। তারা তাদের চাহিদামতো পণ্য কিনে থাকেন।

হাটে বাঁশের তৈরি পণ্য কিনতে আসা হযরত আলী জানান, পরিবারে সারা বছরই বাঁশের তৈরি পণ্য ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের স্বার্থেই পরিবেশবাধন্ধব এই শিল্পকে ধরে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত