নদীর বুকজুড়ে শুধু ধু-ধু বালুচর

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. মতিউর রহমান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামের মহাপরিকল্পনার আওতায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ধলেশ্বরী ও গাজীকালী নদী খনন হয়েছে বছর দুই। অথচ সেই নদী এখন পানিশূন্য। নদীর বুকজুড়ে শুধু ধু-ধু বালুচর। নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের। স্থানীয়দের অভিযোগ নদী খননের হরিলুট ও মাটি বাণিজ্য হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নদী খননের উন্নয়নের নামে মাটি নেয়ার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি টাকার সড়ক পথ।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নদীভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ছয়টি লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ মহাপরিকল্পনা একনেকে পাস হয় ২০১৮ সালে। এই পরিকল্পনার আওতায় ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল, ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখ সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে গোপালপুর হয়ে সাটুরিয়ার গাজীখালী পর্যন্ত ৪৫.৫০ কিলোমিটার নদী খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচটি প্যাকেজে এই খনন কর্মসূচির চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এদিকে সাটুরিয়া ধলেশ্বরী নদীর মুখ থেকে গাজীখালী নদীর দুটি প্যাকেজের ১০ কিলোমিটার নদী খননের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। কাজ শেষের সময় ধরা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস। তবে এক বছর সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ হয় গত ২০২১ সালের শেষ দিকে। গাজীখালী নদী খননের পর এখন শুকনোয় ঠনঠনায় পরিনত হয়েছে।

পাঁচটি প্যাকেজের ১নং বা প্রথম প্যাকেজটি শুরু হয়ে তিল্লি মুখ থেকে জান্না পর্যন্ত ১০.২০ কিলোমিটার অংশে। সরেজমিন দেখা গেছে নদীর এই অংশে কয়েকটা ডোবারমতো থাকলেও বেশিরভাগেই কোনো পানি নেই। ধু-ধু বালুচর। মানুষের পায়ে হাঁটা পথের দাগ। অনেক স্থানে চাষ হয়েছে ধান ও ভুট্টার। নদীর অনেক যায়গায় দেখা গেল মাটি খুড়ে অস্থায়ী কুয়া নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। মাস্তারঘাট এলাকায় নদীর ওপরে ব্রিজের নিচে দেখা গেল হাঁটু পানিতে দুই-তিনটি ছোট নৌকা অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যেখানে কালিগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। যাকে তিল্লি মুখ নাম অবহিত করা হয়। দেখা গেল তিল্লি মুখে বিরাট চর পড়ে দুই নদীকে বিভক্ত করে ফেলেছে। কালিগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও ধলেশ্বরী নদীতে কোনো প্রবাহ নেই।

স্থানীয়রা জানালেন ধলেশ্বরী নদীর মুখ গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বন্ধ ছিল। বর্ষার এক দুই মাস পানি প্রবাহ থাকত। সেভাবে বর্ষা না হলে কোনো কোনো বছর ধলেশ্ব¦রী থেকে গাজীখালীতে পানি ঢুকতে পারত না। দুই বছর আগে ধলেশ্বরীর মুখসহ পুরো নদীতেই বেশ তোরজোর করে মাটি কাটা শুরু হয়। হাজার হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি হয়েছে। এক পর্যায়ে ধলেশ্বরী মুখ দিয়ে পানিও ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু গত বছর বর্ষার সময় আবার পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এখন সেখানে বিশাল চর। যে কারণে ধলেশ্বরী নদী খনন করলেও পানি থাকে না।

ধলেশ্বরী নদীর মুখেই বাড়ি আব্দুল মজিদের। তিনি বলেন, ধলেশ্বরীর মুখে যথেষ্ট গভীর করে খনন না করার কারণে চর পড়েছে। যদি কালিগঙ্গার গভীরতায় ধলেশ্বরীও গভীর করে খনন করা হতো তা হলে এত দ্রুত বন্ধ হয়ে যেত না। তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খননে মাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হলো আসল কাজ কিছুই হয়নি।

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা দীপক ঘোষ বলেন, কেবল তিল্লি থেকে জান্না পর্যন্তই নয়, প্রকল্পের পুরো ৪৫ কিলোমিটারের অবস্থাই প্রায় একই রকম।

ধলেশ্বরী থেকে গাজীখালীর চিত্র একই। কিছু কিছু এলাকায় পানি থাকলেও ধলেশ্বরীর মুখ বন্ধ থাকায় পুরো নদীতে কোনো প্রবাহ নেই। এটি এখন কার্যত একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানিকগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধলেশ্বরী মুখে চর পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজীখালী নদীতে প্রবাহ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে এমন নদীতে পানি প্রবাহ রাখা একটি কঠিন ব্যাপার। সারা বছর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে প্রতি বছরই কিছু কিছু খনন করতে হবে। খননের এরইমধ্যে দুই বছর পার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুনরায় খননের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।