ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় উপহারের ঘর প্রস্তুত

আগামী ২২ মার্চ উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় উপহারের ঘর প্রস্তুত

‘দেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না’- মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে ঘর হস্তান্তর হতে যাচ্ছে আগামী ২২ মার্চ। ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নরসিংদী : আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ ধাপে ৯৫ ও আগে দেওয়াসহ মোট ১৯৩ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর এবং দুই শতাংশ জমির দলিল বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আগামী ২২ মার্চ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে নরসিংদীর পলাশ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন-মানের এই পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে পলাশ উপজেলায়। এর আগে বঙ্গকন্যার দেওয়া উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের মাঝেরচর, বরাব এবং চরসিন্দুর ইউনিয়নের কাউয়াদী আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা গঠন করেছে সমবায় সমিতি, নিয়মিত নিচ্ছে উপজেলা থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও নানা প্রশিক্ষণে তারা হয়ে উঠছে স্বশিক্ষিত। এই উপজেলায় আর মাত্র ৯৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করলেই ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হবে। সেই ৯৫টি পরিবারের জন্যও এরই মধ্যে রঙিন টিন আর পাকা দেওয়ালের আধাপাকা বাড়িও প্রায় পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন শুধু অপেক্ষা হস্তান্তরের। পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন বলেন, হতদরিদ্র ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষগুলোকে বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ছোঁয়ায় পলাশ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম বলেন, নতুন কোনো চাহিদা না থাকায় আমরা টাস্কফোর্স কমিটি এবং যৌথ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার প্রস্তাব প্রেরণ করেছি।

কাউখালী (পিরোজপুর) : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায়ও ভূমিহীন ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার সুলতানা জানান, ‘ক শ্রেণি’ অর্থাৎ একেবারেই ভূমিহীন ও গৃহহীন ৬০৫ পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যথাক্রমে ১১০, ২৫০, ২০টি মোট ৩৮০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৩৮০টি গৃহ তৈরি করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে সনদপত্র ও দলিলসহ এইর মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত সব পরিবার পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসিত হবে। চতুর্থ পর্যায়ে ২২৫টি ঘরের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে নির্মাণাধীন ঘরগুলোতে তালিকাভুক্ত ২২৫টি ‘ক শ্রেণি’ অর্থাৎ একেবারেই ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে কাউখালীকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এ প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নির্দেশনা ও ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে একক গৃহনির্মাণ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত ম্যানুয়েল’ অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গৃহগুলো নির্মাণ কার্যক্রম নিয়মিতভাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার সুলতানা ও জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়।

রায়পুরা (নরসিংদী) : রায়পুরায় ৭৫ ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে স্বপ্নের ঠিকানা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর। আশ্রয়ণে অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার- এই স্লোগানকে সামনে রেখে নরসিংদীর রায়পুরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন-মানের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সরেজমিন রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ও হাইরমারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবন। কবির ওই ভেন্না পাতার ছাউনি থেকে তারা এখন বসবাস করছে রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে। সেই বাড়িতেই করছেন শাকসবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস-মুরগি-ছাগল-গরু পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই সুবিধাটি পেয়ে মহাখুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো। রায়পুরায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা এরই মধ্যে গঠন করেছেন বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ড্রাইভিং, কৃষি, মৎস্য, ব্লক বাটিক, সেলাই কাজসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও নানা প্রশিক্ষণে হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকিতে ক্রমেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের নানা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া রায়পুরা উপজেলার আশ্রয়ণের বাসিন্দা লাকি, শাজাহান মিয়া, লাল মিয়াসহ অনেকেই জানান, কিছু দিন আগেও ভাবিনি নিজের ভালো একটা ঠিকানা হবে। এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। নিজের হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি- সত্যিই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় জেলায় হতদরিদ্র যাদের বসবাসের কোন ঠিকানা ছিল না, তাদের স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। ওই মানুষগুলো তাদের ভাগ্যে চাকা নতুনভাবে ঘুরাতে শুরু করেছে। নতুন করে আরও ৭৫টি ঘর আগামী ২২মার্চ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, তন্মধ্যে আদিয়াবাদ ১৫টি, অলিপুরা ৫টি ও হাসিমপুর এলাকায় ৫৫টি। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবন-মান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। চরসুবুদ্ধি আশ্রয়ণ প্রকল্পে এরই মধ্যে ২০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেছি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের মধ্য থেকে শতাধিক ছেলেমেয়েকে ড্রাইভিং, কৃষি, মৎস্য, ব্লক বাটিক, সেলাইসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসেছি। তারা এখন অনেক ভালো আছে। এই প্রকল্প বিশেষ একটি রোল মডেল। কারণ এভাবে কোনো দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ছাদ তৈরি করা হয়নি। জমিসহ আরও ৭৫টি ঘর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

নাটোর : লালপুর, বড়াইগ্রাম এবং গুরুদাসপুর উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে চলেছে। গতকাল রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রশাসক শামীম আহমেদ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজার ৬৭০টি। এরই মধ্যে তিনটি পর্যায়ে বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৩৮৪টি গৃহনির্মাণের মাধ্যমে উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ চারটি পর্যায়ে লালপুর উপজেলায় ৬২৯টি, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬৪৫টি এবং গুরুদাসপুর উপজেলায় ৩৯৪টি গৃহনির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় সেনাবাহিনীর নির্মিত ব্যারাকে ২৭০টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে।

তারাগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় নিজস্ব ঠিকানা পেতে যাচ্ছে ৯৮ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। এরই মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উপজেলার ৫টি স্থানে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৮টি বাসস্থান। উপজেলা নির্বাহী অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে তারাগঞ্জ উপজেলায় ৫টি স্থানে মোট ৯৮টি গৃহনির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের পাকজান ক্যানেলের পাড় নামক স্থানে ১১টি ও ইমানের বাজারে ১০টি গৃহ, সয়ার ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ গ্রামে ১১টি ও কুর্শা ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে ১৮টি।

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের পদ্মপুকুর ও নিম বাগান নামক স্থানে রয়েছে ৪৮টি প্রস্তুতকৃত বাসস্থান।

সূত্র আরও জানায়, টিনশেডের এই পাকা ঘরগুলো দুই কক্ষ বিশিষ্ট একক গৃহ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত