ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা

গৃহহীনরা পাচ্ছে স্বপ্নের ঠিকানা

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আজ বুধবার ঘর হস্তান্তর কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বগুড়া : বগুড়া জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, জেলায় ক শ্রেণির ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে মুজিববর্ষে ৪ হাজার ৮০৫টি ঘর ভূমি ও গৃহহীনদের হস্তান্তর করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে জেলায় ‘ক’ তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৪৫২ জনকে একক ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছরে জুন মাসে বিতরণ করা হয় ৮৫৭টি একক ঘর। তৃতীয় পর্যায়ে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল বিতরণ করা হয় ৯৩০টি একক ঘর। এরপর ২১ জুলাই ৩৫৪টি ঘর ভূমি ও গৃহহীনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ঘর নির্মাণ করে তা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। ঘর হস্তান্তর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বগুড়ায় বিভিন্ন সময়ে ঘর হস্তান্তর করার মধ্যে জেলার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন ঘোষণা করা হয়। দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে ‘ক’ তালিকাভুক্ত ভূমিহীন-গৃহহীন উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৩২৯ জন। ২০২২ সালের ২১ জুলাই এর মধ্যে ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে দুপচাঁচিয়া উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। এছাড়া নন্দীগ্রাম উপজেলাতে ‘ক’ তালিকাভুক্ত ভূমিহীন-গৃহহীন উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৪০৪ জন। প্রত্যেককে ঘর বুঝিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলাকেও ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এবার বগুড়ায় বাকি ১ হাজার ৪১২টি ঘরের মধ্যে নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে ১ হাজার ৩৩২টি ঘরের। আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘরগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার স্বম্ভাবনা রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষে মার্চের মধ্যেই সেই ঘরগুলো প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন। চাহিদা মোতাবেক ঘরগুলো নির্মাণ হচ্ছে বগুড়ার ১২টি উপজেলায়। চলতি বছর ঘরগুলো হস্তান্তরের পর বগুড়ার আরো দুুটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। উপজেলা দুটি হলো ধুনট ও কাহালু উপজেলা। এই দুটি উপজেলা শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘর বুঝিয়ে পেয়েছে। এই নিয়ে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করা হলো। বগুড়াতে ভূমিহীন-গৃহহীন প্রতি পরিবারকে দুই শতক জমিসহ একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট একক ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে এবার জেলার দুটি উপজেলা কাহালু ও ধুনট উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। চলতি মাসে কাহালুতে আরো ১০টি ঘর ও ধুনটে আরো ২৮টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এই হস্তান্তরের মাধ্যমে এই দুটি উপজেলাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন। এর আগে দুপচাঁচিয়া ও নন্দীগ্রাম উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে বগুড়া জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। এটিই বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ।

টাঙ্গাইল : মধুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্বপ্নের ঠিকানা সেমি পাকাঘর পেল ভূমিহীন দরিদ্র ৩৭০ পরিবার। মাথাগোজার ঠাঁই পেয়ে খুশি হতদরিদ্র পরিবারগুলো। ঠিকানাহীন পরিবারগুলো ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন। এখন আর মেঘের গর্জন শুনে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না তাদের। চমকে উঠতে হয় না বৃষ্টির ভয়ে। দিন শেষে স্বপ্নের নিবাসে ফিরে নিশ্চিন্তে ঘুমান তারা।

সরেজমিন, মধুপুর শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে শোলাকুড়ি ইউনিয়নের সুতানালী দীঘির পাড়। দীঘির পশ্চিম পাশজুড়ে রঙিন টিনের ঝলকানি। দূর থেকে দেখে মনে হয়, সারি সারি ঘরের বাহার। একপাশে বাজার অন্যপাশে পুরোনো গুচ্ছ গ্রাম। পাশ দিয়েই রয়েছে পুরোনো বসতি। পশ্চিম পাড়ের পুরোটা শেখ হাসিনার দেয়া গৃহহীন, আশ্রয়হীন, ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানা। দক্ষিণ থেকে উত্তর পাশ পর্যন্ত লম্বালম্বি রঙিন টিনের সেমিপাকা অগণিত ঘরের সারি। সামনে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে চাষ করছেন নানা সবজি।

শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, শোলাকুড়ি ইউনিয়নের দীঘির পাড়ে গৃহহীনরা ১১০টি ঘর পেয়েছে। আশ্রয়হীন মানুষদের এ ঘর দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানান। স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপিকেও ধন্যবাদ জানান।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমীন জানান, ভূমি ও গৃহহীন হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ যুগান্তকারী পদক্ষেপে মধুপুরবাসীর পক্ষ থেকে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মধুপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩৭০টি ঘরের মধ্যে তিনটি ধাপে প্রথম পর্যায়ে ৬২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০টি, তৃতীয় পর্যায়ে ১০৩টি ভূমি ও ঘরের দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। গত বুধবার (২২ মার্চ) চতুর্থ পর্যায়ে পাঁচটি হস্তান্তর করা হবে। সুবিধাভোগীরা ২ শতাংশ জমি কবিলিয়ত মিউটেশনসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাস্তুহীন ভূমিহীন ৩৬৭টি পরিবারের মাঝে নতুন ঘর উপহার দেয়া হবে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বারান্দা, কিচেন ও বাথরুম। এছাড়া বিদ্যুৎসংযোগ, সুপেয় পানিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাদের জন্য।

আজ সিংগাইর উপজেলায় ১৬৩টি, হরিরামপুর উপজেলায় ৭৭টি, শিবালয় উপজেলায় ৬২টি, দৌলতপুর উপজেলায় ৩৪ ও সদর উপজেলায় ৩১টি গৃহহীন পরিবারের কাছে জমিসহ ৩৬৭টি ঘর হস্তান্তর করা হবে।

রাঙামাটি : আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটিতে চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ পাচ্ছেন ৪৩৯টি পরিবার। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক ঘর বরাদ্দ করবেন। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় চতুর্থ পর্যায়ে আরো ৪৩৯টি পরিবারের মাঝে ভূমিসহ ঘর দেয়া হবে। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৮৪টি ঘর, বাঘাইছড়িতে ৮০টি ও লংগদুতে ৮৩টি, নানিয়ারচরে ২৭টি, বরকলে ৪০টি, রাজস্থলীতে ১৪টি, জুরাছড়িতে ৭০, কাউখালীতে ৪১টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।

আজ সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটি কুমার সমিত রায় জিমনেশিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

চকরিয়া (কক্সবাজার) : ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জ্জামান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার, উপজেলা টেকনিশিয়ান এরশাদুল হকসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধিনে চকরিয়া উপজেলার ভূমিহীন ৮৭৪টি পরিবারের জন্য একটি করে নতুন বাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই আলোকে উপজেলা প্রশাসনের যাছাই বাছাই শেষে ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী উপজেলায় সর্বমোট ৮৭৪টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় প্রথম পর্যায়ে সরকারি খাসজমিতে ১৮২টি নতুন বাড়ি নির্মাণপূর্বক বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৫০০ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে জমির দলিলসহ নতুন বাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হয়। তারা সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন।

ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, বসবাসরত পরিবার সদস্যদের স্বাবলম্বী করতে তিনটি সমিতি গঠন করা হয়েছে। আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে ১২৯টি পরিবারকে পুষ্টিবাগান প্রদর্শনীর মাধ্যমে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপকারভোগী পরিবারের ৪৫ জন নারী-পুরুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি ভাতার সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত এসব পরিবার সদস্যদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বেশিরভাগ পরিবারের নারী-পুরুষকে মহিলাবিষয়ক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সরকারি সেবার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ ও সংযোগ সড়কগুলো জিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।

গাইবান্ধা : ছয় উপজেলায় মোট ১ হাজার ১৭টি পরিবারকে জমিসহ পাকাঘর হস্তান্তর করা হবে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গাইবান্ধা জেলায় ভূমিহীন-গৃহহীন ৪ হাজার ৫৬৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশব্যাপী ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষের জন্য গৃহ ও জমি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গাইবান্ধা জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ১৭টি পরিবারকে জমিসহ পাকাঘর হস্তান্তর করা হবে।