নওগাঁয় বেড়েছে লেবুর দাম। দাম বেশি পেয়ে চাষিরা খুশি হরেও বেজার ভোক্তারা। চাষিদের কাছ থেকে লেবু কিনে একই হাটে বিক্রি করছেন স্থানীয়রা দোকানীরা। হাত বদলেই চাষিদের কাছ থেকে কেনা লেবু ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুন দামে। লেবুর উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম হয়েছে। গাছে লেবুর ফুল আসছে। আবার কিছু গাছে ফুল থেকে লেবুতে পরিণত হয়েছে। তবে পরিপক্ব হয়ে বাজারে আসতে আরও ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে লেবুর সরবরাহ বেশি থাকবে। আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি হলে ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দামও বাড়বে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি দাম পেয়ে লাভবান হলেও চাষিরা প্রকৃত দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আর প্রকৃত দাম না পেয়ে ক্ষোভের বসে অনেকেই লেবুর বাগান কেটে সেখানে অন্য ফসল চাষাবাদ করছেন চাষিরা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলা এ বছর ১৮২ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে লেবুর বাগান রয়েছে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের লেবু চাষি দেলোয়ারা বেগম। গতকাল বৃহস্পতিবার মির্জাপুর (চাঁনপুর হাট) গ্রামের হাটে ৭৫ পিস লেবু বিক্রির জন্য নিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়িরা এক ধরনের কাড়াকাড়ি করেই লেবুগুলো ৩ টাকা ২৫ পয়সা থেকে সাড়ে ৩ টাকা পিস হিসেবে কিনে নেন।
দেলোয়ারা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে দুই কাঠা জমিতে গত ৪ বছর আগে দেশীয় জাতের লেবুর বাগান করেছেন। সপ্তাহে দু’দিন লেবু উঠিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে পান। কিছুদিন আগেও প্রতিপিস লেবু ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছিলেন। গরম শুরু হয়েছে সেই সঙ্গে রজমান মাস। রমজান মাসে লেবুর চাহিদা থাকে বেশি। এজন্য একটু দাম পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। মির্জাপুর হাটে চাষিদের কাছ থেকে লেবু কিনে বিক্রি করছেন স্থানীয় সবজি দোকানী হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, বাজারে লেবুর সরবরাহ খুবই কম। হাতে গোনা কয়েকজন চাষিরা লেবু নিয়ে আসে। তবে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৫-৬ টাকা পিস হিসেবে ৫০টি লেবু কিনেছি। প্রতিপিস ১০ টাকা হিসেবে বিক্রি করছি। তবে দাম শুনে অনেক ক্রেতা চলে যাচ্ছে। অনেকেই লাফিয়ে উঠার মতো অবস্থা। আগামীতে আরও দাম বাড়তে পারে।
মির্জাপুর গ্রাম থেকে নওগাঁ শহরের দূত্বর প্রায় ১২ কিলোমিটার। একই দিনে শহরের পৌর পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতিপিস লেবু বিক্রি হচ্ছে এলাচ জাতীয় ৪-৫ টাকা এবং চায়না-৩ জাতের ৩-৪ টাকা। পাইকারি বাজারের রাস্তার পশ্চিম পাশে ১০০ ফুট দূরে পৌর সবজির খুচরা বাজার। এ পাইকারি বাজার থেকে খুচরা সবজি ব্যবসায়ীরা লেবু কিনে বিক্রি করছেন প্রায় দ্বিগুন দামে।
নওগাঁ পৌর খুচরা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ দিন থেকে লেবুর বাজার এখন ঊর্ধ্বমূখী। সিডলেস চায়না-৩ জাতের লেবু ৪ টাকা পিস এবং দেশি এলাচ জাতীয় লেবু ৫ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব লেবু ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে কিনা হয়েছে। এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৮-২০ হাজার পিস লেবু বিক্রি হয়। নওগাঁর বদলগাছী, নাটোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে পাইকারি দরে লেবু কিনে নিয়ে আসা হয়। রমজান শুরু হবে এজন্য দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরও দাম বাড়বে।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ী বাদশা আলী বলেন, পাশেই পাইকারি বাজার থেকে লেবু কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করা হয়। পাইকারি বাজার থেকে প্রতিপিস লেবু ৫-৬ টাকায় কিনা হয়েছে। প্রতি পিস খুচরা পর্যায়ে ৭-৮ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বালুভরা গ্রামের লেবু চাষি মেছের আলী বলেন, ২৫-৩০ পয়সা পিস হিসেবে লেবু বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠে না। অথচ ওই লেবু ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ৪-৫ টাকা পিস বিক্রি করে। আমরা কষ্ট করে লোকসান করতে হয় আর তারা কিনে লাভ করে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, লেবুর এখন মৌসুম না (অফ সিজন) হওয়ায় এবং বাজারে সরবরাহ কম থাকায় চাষিরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে। আগামী ২-৩ মাস পর লেবুর পুরো মৌসুম হবে। তখন লেবুর উৎপাদন বেশি হবে এবং দাম কিছুটা কমে আসবে। বলা যায় চাষিরা এখন লাভবান হচ্ছে।