ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৫৬৩ বছরের প্রাচীন মসজিদ চেহেল গাজী

৫৬৩ বছরের প্রাচীন মসজিদ চেহেল গাজী

দিনাজপুরের ৫৬৩ বছরের একটি প্রাচীন নিদর্শন চেহেলগাজী মসজিদ। ধারণা করা হয়, সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহর রাজত্বকালে (১৪৬০-১৪৭৪ সাল) দিনাজপুরে নির্মিত এটিই প্রথম মসজিদ। তবে এই মসজিদটির নাম পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাতে নেই। জেলা সদর উপজেলার চেহেলগাজী গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের কালনির্দেশক তিনটি শিলালিপি ছিল। এর একটি দিনাজপুর জাদুঘরে ও দুটি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ সালের ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহর রাজত্বকালে তার উজির ইকরার খানের নির্দেশে তৎকালীন পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুর পরগনার শাসনকর্তা উলুঘ নুসরত খান বৃহত্তর দিনাজপুরে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে মসজিদটির দেওয়াল ছাড়া আর কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই। দেওয়ালগুলোও ভগ্নপ্রায়। তবে মেহরাবের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক এখনো বর্তমান। বর্গাকার মসজিদটির মূল কক্ষের ওপর একটি এবং পূর্বদিকের বারান্দার ওপর সম্ভবত তিনটি গম্বুজ ছিল। বাইরের দিকে মসজিদের মূলকক্ষের আয়তন ৪ দশমিক ৯০ মিটার। মসজিদের ভেতরে পশ্চিমদিকে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মেহরাবের অলংকরণে পাথর দেখা যায়। পাথর ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে এ মেহরাবগুলো সুন্দরভাবে অলংকৃত। এদিকে মাজারটিতে সময় নির্দেশক কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওয়েস্টমেকট ১৮৭৪ সালে চেহেলগাজী মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ সালে চেহেলগাজী মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাজারটি সংস্কার করা হয়। শিলালিপিতে চেহেলগাজী বা অন্য কোনো নামের উল্লেখ। পরবর্তীকালে তারা মৃত্যুবরণ করলে তাদেরও এখানে সমাহিত করা হয়। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের কামরূপ অধিকারের সময় (১৩৫৮ সাল) সম্ভবত এ যুদ্ধটি হয়েছিল। এরকম কান্তনগরে (গড় মল্লিকপুর) এবং খানসামায় আরও দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং নিহত সৈনিকদের যৌথভাবে সমাহিত করা হয়। প্রায় ১০০ বছর পরে ১৪৬০ সালে মাজারটি মেরামত করা হয়। আগে মাজারের ওপরে কোনো আচ্ছাদন বা ছাদ ছিল না। ১৯৬৮ সালে এ মাজারের ওপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়। নবনির্মিত ঘরটির আয়তন ২৫ দশমিক ১৫ মিটার। মাজার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চেহেলগাজী মসজিদ, মসজিদের দক্ষিণে আরও একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৭০ মিটার আয়তনবিশিষ্ট উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে। এখনো ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পুরোনো এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ জনের নামাজ পড়ার মতো জায়গা আছে।

সরকারিভাবে পুরো মসজিদের ওপরিভাগে টিনের চালা তৈরি করা হয়েছে। তাতে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেলেও সংস্কার বা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মসজিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মসজিদ ও মাজারের খাদেম মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক নকশা দেখে মসজিদটি সুলতানি আমলের নিদর্শন বলে জানিয়েছেন। জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত