কৃষকরা ঝুঁকছেন সূর্যমুখী চাষে

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হাসান মামুন, পিরোজপুর

বসন্তের শেষ চৈত্রে সূর্যমুখী ফুল তার আপন মহিমায় সৌন্দর্যের বিকাশ ছড়িয়ে মানব মনকে রঙ্গিন বর্ণচ্ছটায় যেমন রাঙ্গিয়ে তোলে, ঠিক তার উল্টো দিকেও রয়েছে এ ফুলের তৈল রন্ধন শিল্পের ব্যাপক গুণাগুণ। সূর্যমুখী ফুলের তৈল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ এক ধরনের ভোজ্য তৈল। একই সঙ্গে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের জন্য এ তৈলের রয়েছে ব্যাপক উপকারিতা ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ। কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ‘হাইসান ৩৩’ জাতের এ সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয় এবং ফুল আসার অন্তত চার মাসের মধ্যে অর্থাৎ চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফুলের বীজ পেকে যাওয়ার পরপরই তা কর্তনযোগ্য হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। গত বছরের চেয়ে এ বছর জমির আবাদ ও কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০০ জনে বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে সূর্যমুখী আবাদে আরও অনেক কৃষক এগিয়ে আসবেন এমনটাই আশা করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী বছর এই আবাদের পরিমাণ ও উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। পিরোজপুর জেলার উত্তরের জনপদ নাজিরপুর উপজেলা ১নং মাটিভাঙা পশ্চিম বানিয়ারী ৯নং ওয়ার্ড। এ জনপদের মৃত্তিকা, ফল, ফুল ও বিভিন্ন কৃষি পন্যের জন্য কৃষক ভাইদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। ফলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার পতিত জমিতে কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে এ ফুলের আবাদে তারা পতিত জমির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন। সূর্যমুখী চাষি শনির বিশ্বাস মিন্টু (৩৭) জানায়, ফুল পেকে গেলে এর বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। আর ১০০ কেজি শুকনো বীজ মেশিনে ভাঙালে তা থেকে পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি পিওর তেল। সূর্যমুখী ফুলের গাছ কর্তনের পর পাইকারদের কাছে এসব ফুলের শুকনো বীজ ও তেল বিক্রয় করেন চাষি ভাইয়েরা। চাষি আলিম মোল্লা (৪৫) আশা করছেন, এ বছর ফলন ভালো হলে পাইকারদের কাছে প্রতি মণ ফুলের বীজ ২ হাজার টাকা এবং তেল করে বিক্রয় করলে প্রতি মণ বিক্রি হবে ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। নাজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, এ অঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধিকল্পে কৃষকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয় সরকার থেকে। এর মধ্যে রয়েছে-বীনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা। সরকার এ চাষের সঙ্গে কৃষকদের আরও উৎসাহ ও চাষে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কৃষি প্রণোদনা দিতে আগ্রহী বলে জানালেন এই কৃষিবিদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডা. মো. নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষের চাহিদা বাড়ছে। দৈনন্দিন তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার পাশাপাশি জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষিকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ চাষে রোগ-বালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তৃণমূল কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী চাষ ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে শুরু করে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।