ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভেকু দিয়ে কাটছে কৃষি জমির মাটি

ভেকু দিয়ে কাটছে কৃষি জমির মাটি

আড়িয়াল বিল প্রমত্তা পদ্মা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর, সিরাদিখান ও ঢাকার জেলার নবাবগঞ্জ এবং দোহার উপজেলার অন্তর্গত একটি অবভূমি। দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন এই আড়িয়াল বিল। আড়িয়াল বিলের বেশিরভাগ এলাকাই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র থাকে এবং বিলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সঞ্চিত থাকে। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও শীতকালে এটি বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়। এই বিলে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করা হয়, বিলের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে বর্ষাকালে পানি থৈ থৈ পালতোলা নৌকা চলাচল, শীতকালে বিলের উপরিভাগ অঞ্চলের মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের অবাক সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির মিষ্টিকুমড়া। দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির মাটি খেকোরা আড়িয়াল বিল দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট বড় বেশ কয়েকটি খাল ও কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে ট্রলার ও মাহিন্দ্রযোগে বিভিন্ন জেলার ইটভাটায় বিক্রি করে যাচ্ছে। এ কারণে ওইসব রাস্তা দেবে গিয়ে এবং খালেরপাড় না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে চলাচল করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে কয়েক ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক। এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় দিন দিন বেড়েই চলছে মাটি বিক্রি। গতকাল শনিবার সরেজমিন উপজেলার হাসাড়া ও বাড়ৈখালী ইউনিয়নের আড়িয়াল বিলের অংশ ঘুরে দেখা যায়, আড়িয়াল বিলে কয়েকটি খাল রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগর আলমপুর খাল, আলমপুর সোনারগাঁও গ্রাম হতে মদনখালী খাল পর্যন্ত বড় খাল, লস্করপুর পুটিমারা থেকে মদনখালী পর্যন্ত খাল, গাদিঘাট থেকে বড় খাল পর্যন্ত খালসহ বেশ কয়েকটি ছোট-বড় খাল রয়েছে। গত ৩ বছর পূর্বে বিলের উত্তর-পশ্চিম অংশে থাকা বড় খালটি জাইকার ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা অর্থায়নে মদনখালী-আলমপুর বাপস সমিতির মাধ্যমে পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন করা হয়। যদিও ওই সময় খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন আড়িয়াল বিলের অনেক কৃষক। কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি আদৌ। খাল পুনঃখনন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা খালের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খালের দুই পাড় ও বিলগামী রাস্তাগুলো।

প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা শতাধিক বড় বড় ট্রলারযোগে প্রতি ট্রলার ১০-১২ হাজার টাকা মূল্যে এসব মাটি বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে আর্থিক লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিরীহ হাজার হাজার কৃষক।

এ ব্যাপারে বাড়ৈখালী আলমপুর বাপস সমিতির সভাপতি আসলাম জানান, খালের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি আড়িয়াল বিলের খালপাড়ে যাই এবং গিয়ে দেখি খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করায় পাড় দিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। পরে আমি খালের পাড় রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করি।

এ বিষয়ে বাড়ৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন মাস্টার বলেন, আমি আড়িয়াল বিলের মাটি বন্ধ করার জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংসহ বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আদৌ এই বিলের মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। মাটি কাটা বন্ধে বাড়ৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ফারুক হোসেন বলেন, গত ৩ বছর পূর্বে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়িয়ালের বিলের বড় খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। এর পর থেকেই খালের দুই পাড়ের বেশিরভাগ মাটিই কেটে নিয়ে বিক্রি করে কৃষকের ক্ষতি করছে। কারা মাটি কেটে বিক্রি করছে সেটা আপনারাও জানেন আমিও জানি আমি কারো নাম বলতে চাই না। এ ব্যাপারে আমি প্রতিবারই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেছি এমনকি লিখিত আকারে বলেছি। কিন্তু আদৌ বিলের মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

বাড়ৈখালী ইউনিয়ন সহকারী তহসিলদার মাহফুজ আহম্মেদ বলেন, এই ব্যাপারে আমি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে পারব না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এই বিষয়ে এসিল্যান্ড সাহেবকে বলা রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত