ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লোকসানের বোঝা বাড়ায় পোলট্রি খামারিরা খামার গুটাচ্ছেন

লোকসানের বোঝা বাড়ায় পোলট্রি খামারিরা খামার গুটাচ্ছেন

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিলাইমারী গ্রামে লেয়ার মুরগির খামার করেছিলেন নওশাদ আলী ২০১৯ সালে। ওই সময় এক হাজার মুরগি নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। শুরুটা তার ভালোই ছিল। নওশাদ আলীকে দেখে তার আরো তিন ভাই ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যে খামার করেন। দীর্ঘ সময়ে চার ভাই ১৮টি মুরগির শেড করেন। প্রতিটিতে এক হাজার করে তাদের মুরগি ছিল। গত দুই বছরে মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় বর্তমানে তারা ব্যবসা গুটানো শুরু করেছেন। ৯টি শেডে রেখেছেন সাত হাজার মুরগি। তারা বলছেন, স্থানীয় এনজিওসহ পোলট্রি ফিডের দোকানে চারজনের বকেয়া এক কোটি টাকা। ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হলে মহাজনরা একসঙ্গে টাকা ফেরত পেতে চাপ দেবেন। এজন্য লোকসান গুনলেও ব্যবসা ধরে রেখেছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলায় ১৩ জন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় এক বছরের ব্যবধানে নওশাদ আলী ও তার ভাইদের মতো লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন তিন শতাধিক খামারি। যারা খামার ধরে রেখেছেন, তারাও কমিয়েছেন মুরগির সংখ্যা। পোলট্রি খামারিরা বলছেন, নানা কারণে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এর মধ্য মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অন্যতম। এছাড়া সরকারি নজরদারি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্যের কারণে তারা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন না। কয়েকজন প্রান্তিক পোলট্রি খামারি বলছেন, বর্তমানে একটি ডিম উৎপাদনে তাদের ৯ টাকা ৪০ পয়সা খরচ পড়ছে। সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দাম পাচ্ছেন ৮ থেকে ৮ টাকা ৭৫ পয়সা। হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি ডিমে ৬৫ পয়সা লোকসান। অন্যদিকে এক কেজি মাংসের উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৬ টাকা ৩১ পয়সা। সম্প্রতি মাংসের দর প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজিতে উৎপাদনকারীদের লোকসান ১৬ টাকা। সাম্প্রতিক সময় পোলট্রি খাতের এই দুরবস্থার কথা স্বীকার করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, দিনাজপুরে ১৯৭টি লেয়ার, ৮৯৩টি ব্রয়লার, ৭৮৬টি সোনালি মুরগির খামারসহ ১ হাজার ৮৭৬টি খামার আছে। যদিও খামারিদের হিসাবে জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৫ হাজারের অধিক খামার রয়েছে। এসব খামারে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১ লাখ পর্যন্ত মুরগি আছে। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন, জেলায় বার্ষিক ৪৮ কোটি, ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৬৫৫টি ডিম উৎপাদিত হয়। আর মাংস ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫ কেজি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ডিম ও মাংস উদ্বৃত্তই ছিল। তবে সাম্প্রতিককালে মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরকার এরইমধ্যে পোলট্রি শিল্পকে নিয়ে ভাবছেন। খুব কম সময়ের মধ্যে একটি নীতিমালা হবে। বিরল উপজেলার লেয়ার মুরগির খামারের মালিক মাসুদ আলী বলেন, কাঁচামাল কিনে নিজেরাই মুরগির খাবার তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ৫৩-৫৪ টাকা। বড় বড় কোম্পানির তৈরি খাবার বাজারে ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই বছর আগে ভুট্টা কিনেছি প্রতি কেজি ২৩ টাকা। সেই ভুট্টা এখন ৩৮-৪০ টাকা কেজি। এভাবে ২ হাজার ২০০ টাকার সয়ামিলের বস্তা (৫০ কেজি) ৪ হাজার ২০০ টাকা, ১ হাজার ২০০ টাকার ধানের কুঁড়া ২ হাজার ৭০০ টাকা, ৪০০ টাকার লাইমস্টোন ৭০০ টাকা, ৭ হাজার টাকার ডিএলমিথিওনিন ১০ হাজার, ৫ হাজার টাকার লাইসিন ৭ হাজার, ৫ হাজার টাকার এনজাইম ৯ হাজার, ৬০০ টাকার খাবার সোডার বস্তার দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় লেয়ার মুরগির খামারি আবদুল আজীজ। নয়নপুর এলাকায় পাঁচটি শেডে খামার করেছেন। এ ছাড়া তিনতলা ভবনের প্রতিটি তলায় মুরগি পালন করছেন। শুরুতে মুরগি ছিল ৪২ হাজার। গত বছর কমিয়ে ২৭ হাজার রেখেছিলেন। সর্বশেষ গত বুধবার পর্যন্ত তার খামারে লেয়ার মুরগি ছিল ১২ হাজার। খামারে কাজ করছেন ১৪ জন শ্রমিক। আবদুল আজীজ বলেন, খামারে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ কেজি খাবার লাগে। শ্রমিকদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, মুরগির খাবার, ওষুধ-ভ্যাকসিনসহ সব মিলিয়ে খামারে দৈনিক খরচ ৮০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত