কৃষকের সোনালি স্বপ্ন পূরণে বাধা ব্লাস্ট

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মল্লিক খলিলুর রহমান, অভয়নগর (যশোর)

যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ফসলের মাঠে এখন প্রকৃত সবুজ ও হলুদ রঙের সমারোহ। কিন্তু কৃষকের সোনালি স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের মাঠ। যতদূর চোখ যায় ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও শীষ। এই সবুজ ধান গাছের ঢেউয়ে দুলছিল বোরো চাষিদের সোনালি স্বপ্ন। হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বেশ কিছু ফসলি মাঠে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যার কারণে উপজেলা বোরো চাষিদের সোনালি স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলার বোর আবাদের মাঠে যখন চারদিকে সবুজে দোল খাচ্ছে। তখনি বোরো চাষিদের সোনালি স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে ব্লাস্ট ভাইরাস নামের রোগটি। ইরি-বোরো ধান লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষক বোরো মৌসুমকে ঘিরেই নানা স্বপ্নে বিভোর থাকে। আর সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে, সোনালি স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে কৃষক পরিবারের। স্থানীয় বোরো চাষিদের মনে উকি দিচ্ছিল এক স্বর্ণালী দিনের।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১৪হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধে প্রায় ১০ হেক্টর ফসলি জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। পৌরসভা এলাকায় ১৫শ হেক্টর ও উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১২ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন। তবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ফসলি জমির প্রায় ১০ শতাংশ (৯.৭) নিয়ন্ত্রণে আছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো আবাদের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের ক্ষেত প্রকৃতির সবুজ ও হলুদ রঙে মিশ্রণে সাজানো মাঠের মাঝের মধ্যে সাদা রং দেখা দিয়েছে।

ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান গাছ সাদা রং হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে রোপা বোরো মাঠে পরিচার্যে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ আগাছা মুক্ত ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, বালাইনাশক স্প্রে, সার প্রয়োগ ও সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। বৃষ্টি একটু কম হওয়ায় ও তাপমাত্রা আনুকুলে না থাকার কারণে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যার কারণে বোরো আবাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে। আর মাত্র ক’দিন পরই সবুজ ধানগাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলি মাঠ। সোনালি স্বপ্নে সোনালি ফসলে ভরে উঠবে কৃষকের উঠান। এটাই ছিল এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারের স্বপ্ন। আগামী আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক আর কোনো দুর্যোগ না ঘটে তাহলে এ অঞ্চলের ইরি-বোরো ধানের মোটা-মুটি ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আবাদকৃত ইরি-বোরো ধান গতবারের চেয়ে ভালো হবে বলে আশা ছিল। কিন্তু কিছু জমিতে ধানে ব্লাস্ট রোগের দেখা দেয়ায় বাম্পার ফলনে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার বাগুটিয়া ইউনিয়নের কৃষক প্রদ্বিপ শীল বলেন, যদিও বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু এ এলাকার বোরো আবাদের মাঠে কিছু কিছু জায়গায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে। রোগ প্রতিরোধে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বালাইনাশক স্প্রে ও ধান ক্ষেত পরিচার্য করিতেছি। যদি আর কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে ভালো ভাবে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে উত্তম দত্ত জানান, সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের নলামারা বিলের ১০ বিঘা জমিতে তিনি বোরো ধান রোপণ করেছিলেন। সম্প্রতি ধানের ফলন আসার পর থেকে ব্লাস্টরোগ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩ বিঘা জমির ধানে ব্লাস্টরোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লাভলী খাতুন বলেন, বোরো আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইরি-বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ধানে এবার ব্লাস্টরোগ দেখা দিয়েছে। ইতোপূর্বে ব্লাস্টরোগ প্রতিরোধে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে। সচেতনতামূলক কৃষকদের মধ্যে ১ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। যেসব ধানের মাঠ ভালো, তাদের প্রতিরোধক বালাইনাশক স্প্রে করার জন্য পরার্মশ দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ফসলি মাঠের প্রায় ১০ শতাংশ (৯.৭) জমি নিয়ন্ত্রণে আছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের প্রণোদনার আওতায় এনে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদাণের চেষ্টা করা হবে। তবে আশাবাদী, আর কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।