নীতিমালাবহির্ভূত ৪৬৫৮ মাছের ঘের

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

ভবদহ এলাকায় মৎস্য ঘের স্থাপন নীতিমালা প্রকল্প উপেক্ষা করে যশোরের কেশবপুরে ৪৬৫৮টি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। এসব ঘের মালিকরা ৫৯টি সরকারি খাল দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছে। ঘের ব্যবসায়ীরা জমির মালিক কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হারির টাকা ঠিকমতো পরিশোধ না করাসহ সময়মতো ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে না বলে অনেক বিলে কৃষকরা বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে জমির মালিকরা নতুন করে ঘের ব্যবসায়ী খুঁজে বেশি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ডিড করে দেয়। এনিয়ে ঘের মালিক পক্ষের মধ্যে হামলা, মামলা, সংঘর্ষ লেগেই আছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় ছোট বড় মিলে ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের রয়েছে। যার মধ্যে কৃষিজমি প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর ( ৫৬ হাজার ২৫০ বিঘা)। এসব ঘেরে সরকারি খাল রয়েছে ৫৯টি। যার আয়তন ৩৯৪ হেক্টর (২ হাজার ৯৫৫ বিঘা জমি। প্রতিবছর এসব ঘেরে দেশি মাছ ছাড়াও গলদা, বাগদা, সাদা মাছ, কুচিয়া ও কাঁকড়া উৎপাদন হয়। ২০১৯ সালের ভবদহ এলাকায় মৎস্য ঘের স্থাপন নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, একজন ব্যক্তি ১৫ হেক্টর ও সমবায় ভিত্তিতে ৫০ হেক্টরের বেশি জলাকার নিয়ে মৎস্য ঘের করতে পারবে না এবং চুক্তিপত্রে শতভাগ জমির মালিকের স্বাক্ষর থাকতে হবে। কিন্তু এ নীতিমালা উপেক্ষা করে সরকারি রাস্তা বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করে অধিকাংশ ঘের গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ীর ১৫/১৬টি করে মাছের ঘের রয়েছে। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশাননগর বিলের পরেশ ও ভবেন মন্ডলের মাছের ঘেরটির ডিডের মেয়াদ ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। জমির মালিকরা ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বিশ্বাসকে ঘেরটি ডিড করে দেয়। এ ঘটনা জানতে পেরে চলতি মাসের ১ম সপ্তাহে পরেশ মন্ডল ও ভবেন মন্ডল সন্ত্রাসী ভাড়া করে ওই ঘেরে মাছ ছেড়ে দেয়।

এদিকে, পাঁজিয়া ইউনিয়নের সাগরদত্তকাটি আমতলা বিলের মাছের ঘেরটি ২০১৬ সাল থেকে ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বিশ্বাস মাছ চাষ করছেন। গেল বছরের ৩০ চৈত্র ঘেরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কৃষকরা পুনরায় কামরুজ্জামান বিশ্বাসকে ডিড করে দেয়। আবার কিছু কৃষক অপর ঘের মালিক কেরামত গাজীকে ডিড করে দেয়। এনিয়ে দুই ঘের মালিকের মধ্যে হামলা মামলা লেগেই ছিল। একই বছর ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের মূলগ্রামের ঘেরটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্থানীয় ঘের মালিক আব্দুর রাজ্জাক কিছু জমির মালিককে ম্যানেজ করে প্রভাব খাটিয়ে ঘেরটি দখলে নিয়ে নেয়। ২০১৮ সালে ঘের মালিক সুলতান আহমেদের বলদহালি বিলের ৪০০ বিঘার মাছের ঘেরে তার প্রায় কোটি টাকার মাছ ছিল। ৫ বছর মেয়াদ থাকা অবস্থায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ক্ষমতাধর এক নেতা জোর করে ঘেরটি দখল করে নেয়। শুধু এ চারটি ঘের নয় কেশবপুরের অধিকাংশ ঘের নিয়ে ব্যবসায়ীরা দখল পাল্টা দখল খেলায় মেতে উঠেছে। যখন তখন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি। ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, আশাননগর বিলের ৪৭৫ বিঘা জমির মাছের ঘেরটি জমির মালিক কৃষকরা আমার নামে ডিড করে দেয়। একথা জেনে সাবেক ঘের মালিক পরেশ মন্ডল ও ভবেন মন্ডল সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে মাছ ছেড়ে দেয়। ১৪ এপ্রিল আমি ওই ঘেরে মাছ ছেড়ে দেব। পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলের ভেতর সরকারি খাল ঘের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেকে দখলমুক্ত করতে পারলে আর কখনও জলাবদ্ধতা দেখা দেবে না। এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা বলেন, আইন অধিশাখার ঘের সংক্রান্ত নীতিমালা এ উপজেলার ঘের ব্যবসায়ীরা মানেন না।