পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীর ভিড়

উপলক্ষ্য ঈদ

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজে, পটুয়াখালীর দুমকির লেবুখালী পায়রা সেতু এবং শেরপুরের ঝিনাইগাতির সীমান্তের পর্যটনগুলোতে ঈদ উপলক্ষ্যে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লালমনিরহাট : ঈদে দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় জমেছে। ঈদের দিন বিকাল থেকে প্রতিদিন সারা বেলা মানুষের ঢল নামছে। কেউ আসছেন মোটরসাইকেলযোগে, কেউ অটোরিকশায় কেউ বা মাইক্রোবাসযোগে। তিস্তার ভাটিতে নৌকা আর স্পিডবোটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। ব্যারাজের ওপর মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে ব্যস্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ব্যারাজের দুই পাড়ে হরেক রকমের পসরা নিয়ে বসেছে অস্থায়ী দোকান। নীলফামারী থেকে আসা শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু তিস্তা ব্যারাজে ঘুরতে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। প্রতি ঈদে আমরা এখানে ছুটে আসি আনন্দ উপভোগ করতে। হাতীবান্ধা থানার দোয়ানি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক দিপ্ত কুমার বলেন, প্রতিবছর পরিবার-পরিজন নিয়ে তিস্তা ব্যারাজে আনন্দ উপভোগ করতে আসেন দর্শনার্থীরা। তিস্তা ব্যারাজের পুরো এলাকায় আনসার ও পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন।

এদিকে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার মানুষের মেলবন্ধনে মহিপুর-কাকিনা পয়েন্টে নবনির্মিত শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুতেও ছুটছেন হাজারো মানুষ। এখানে আসা সিংহভাগই তরুণ-তরুণী। বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে শিশুরাও।

দুমকি (পটুয়াখালী) : ঈদের ছুটিতে হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন লেবুখালী পায়রা সেতু। ঈদের দিনে প্রচণ্ড রোদ ও গরম আবহাওয়ায় ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও আনন্দকে উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু চিত্তবিনোদনের জন্য পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার দৃষ্টিনন্দন লেবুখালী পায়রা সেতুতে ভিড় করছেন হাজারো দর্শনার্থী। এতে যান চলাচল সচল রাখতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। ঈদের দিন দুপুর থেকেই পায়রা সেতু মুখর হয়ে উঠতে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি ও শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায়। ঈদে বাড়তি আনন্দ আর বিনোদনের জন্য দুমকি, বাউফল, পটুয়াখালী জেলা শহর ও বরিশাল, বাকেরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোররাও ভিড় করছে পায়রা সেতুতে। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় জমায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট, চটপটি-ফুসকা, ছোলা-বাদাম বিক্রেতাদের বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি হকার ও ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে ঘুরতে আশা মরিয়ম নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, কুয়াকাটা ছাড়া আমাদের এলাকায় ভালোমানের তেমন কোনো বিনোদন স্পট নেই। তবে লেবুখালী পায়রা সেতু হওয়াতে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। এখন মন চাইলেই আমরা ঘুরতে যেতে পারি।

লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আ. সালাম বলেন, লেবুখালীর পায়রা ব্রিজ ও পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন বিনোদন স্পটে হাজার হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। পরিবেশ শান্ত রাখতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকি। দুমকি থানার ওসি আবুল বাসার জানান, ব্রিজে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এবং পরিবেশ শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্রিজের দুই পাশেই টহল দিচ্ছেন। আশা করি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : শেরপুরের সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত গারো পাহাড়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পাহাড়ের লুকোচুরি দেখতে ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীর ঢল নামছে। রোজার কারণে একমাস ফাঁকা ছিল পাহাড়ঘেরা পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দর্শনার্থীর অভাবে ব্যবসা করতে পারেনি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ঈদে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে গজনী অবকাশ ও মধুটিলা ইকোপার্কে সারা দেশ থেকে ছুটে আসছে দর্শনার্থী। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গজনী অবকাশ কেন্দ্রে নতুন করে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক, ওয়াটার কিংডম ও প্যারাডোবা, ঝুলন্ত ব্রিজ, রুফওয়ে, জিপলাইনার, ক্যাবলকার, প্যাডেল বোর্ড, সাম্পান নৌকা, ঝর্ণাধারাসহ আকর্ষণীয় রাইডস মন কাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এছাড়া সীমান্তের এপার ও ওপারের পাহাড়গুলোর লুকোচুরি খেলা তো আছেই। পাশাপাশি বন বিভাগ গড়ে তুলেছে মধুটিলা ইকোপার্ক নামে পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পেডেল বোর্ড, মিনি চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন রাইডস। এছাড়াও শেরপুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ক্যাফে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত গারো পাহাড় এলাকা।

শ্রীবরদী থেকে আসা আফরা নাওয়ার হিলালী বলেন, ‘ঈদে বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। অনেক লোকজন হয়েছে। পেডেল বোর্ডে উঠলাম অনেক মজা করলাম।’

জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গীতা বলেন, ‘ঈদের পরের দিন বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ থেকে এক সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। নতুন নতুন অনেক রাইডসে উঠলাম। অনেক কিছু কেনা-কাটাও করলাম। দারুণ লেগেছে শেরপুরের গারো পাহাড়। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী রাহিম বলেন, এখন গরম তাই নতুন করে গরমের কাপড় তুলেছি। বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে।

পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহম্মেদ বলেন, শীতে মোটামুটি ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু রোজা এসে পড়ায় আবার একমাস বন্ধ ছিল। এখন ঈদে লোকজন আসা শুরু করেছে। যদি সপ্তাহ জুড়ে এমন লোকজন আসে তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। পর্যটন কেন্দ্রের গারো মা ভিলেজের রাইডস ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, এভাবে পর্যটকরা আসলে আমাদের জন্য ভালো।

রাইডস ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা রাইডসগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়েছি। এতে দর্শনার্থীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। এক মাস বন্ধ থাকায় পাহাড়ের প্রকৃতিও সুন্দরভাবে সেজেছে। এবার ঈদে দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে। আমরা রোজায় বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, গজনীতে নতুন নতুন অনেক রাইডস সংযোজন হওয়ায় এবারের ঈদে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। আরও অনেক কাজ চলমান আছে। জেলা ব্যান্ডিং কর্নার তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে শেরপুর জেলার ব্যান্ডিং করা জিনিসগুলা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং জেলার পরিচিতি বাড়বে। আমরা গজনী অবকাশ কেন্দ্রের অনেকটাই উন্নয়ন করেছি। এখানে সারা বছর যেন দর্শনার্থীর সমাগম থাকে এজন্য আলাদা কিছু রাইডস করা হয়েছে। গারো পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।