বর্ষায় নৌকা দিয়ে নদী পারাপার

পাঁচ গ্রামের একমাত্র ভরসা আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর নড়বড়ে বাঁশের সেতু

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  একে এম রেজাউল করিম, রায়পুরা (নরসিংদী)

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী রাধাগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। এ নদের উপর কোনো সেতু না থাকায় নদের দুই পাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ইজারাদারের নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সেতু। বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সেতুটি ডুবে গেলে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এক প্রতিবন্ধী হাঁটুতে ভর দিয়ে সেতু পার হচ্ছে। লাঠি ভর করে সাঁকো পার হচ্ছেন এক বৃদ্ধ। গ্রামের কয়েক কৃষক ঝুঁকি নিয়ে তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন। সেতুর দুই প্রান্তে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি আলিয়া মাদ্রাসা। এ সেতু দিয়ে শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন চলাচল করে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলেও জানা যায়। এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বাঁশের তৈরি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রসূতি ও জরুরি রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে বেকায়দায় পড়তে হয় আরও বেশি। প্রতিবছরই বর্ষার প্রবাল স্রোতে সেতুটি ভেঙে গেলে চলাচল করতে হয় নৌকার মাধ্যমে। শুষ্ক মৌসুমে ইজারাদারের উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে আবার তৈরি করতে হয়। প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে এই ভাঙাগড়ার খেলা। হাসান সরকার নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বলেন, নদী পারাপারে সেতু না থাকায় কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শিশু-নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভোগান্তি আরও বেশি। ভারী বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। প্রায় ৪০ বছর ধরে এভাবেই চলছে। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, সবাই আশ্বাস দিলেও সেতু হয় না। প্রতিবন্ধী বাদল মিয়া বলেন, এ বাঁশের সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। একটু বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। তখন আমদের মতো প্রতিবন্ধীদের সেতুর পাড়ে বসে থাকতে হয়। সেতু পার হতে পারি না। এ সেতু দিয়ে শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার প্রায় ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের লোকজন যাতায়াত করে।

স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকার ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে যখন বাঁশের সেতুর পরিবর্তে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তখন আমারা ঢাকা থেকে আসতে রাত হয়ে গেলে নৌকা ও পাওয়া যায় না। তখন আমদের পড়ে বসে থাকতে হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে নদী পারাপারের সময় নৌকাডুবির মতো ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী ও রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতু ইজারাদার হিরণ মিয়া বলেন, এ বাঁশের সেতুটি নির্মাণ ও ইজারাবাবদ আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। এখানে কোনো স্থায়ী সেতু না থাকায় এলাকাবাসী অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে কষ্টের সীমা থাকে না। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্ষামৌসুমে নৌকাডুবির মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এ সেতু দিয়ে শিবপুর, রায়পুরা, মনোহরদী ও বেলাব উপজেলার লোকজন যাতায়াত করে। এ সেতুর তীরে ঐতিহ্যবাহী রাধাগঞ্জ বাজার অবস্থিত। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে রাধাগঞ্জ বাজারসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে। আদিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. সেলিম মিয়া জানান, এই নদের উপর একটি সেতু না থাকায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রায়পুরা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামীম ইকবাল মুন্না বলেন, সমীক্ষা যাচাই ও সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পরও এটি খ শ্রেণির নদী হওয়ায় সেতুটি বাসতবায়ন হতে দেরি হচ্ছে।