বগুড়ার শেরপুরে প্রতি বছর বারুনী মেলা শেষে ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের গাড়ীদহ নামক স্থানে করতোয়া নদীর পশ্চিম কোলঘেঁষে এই মেলা বসে। মেলায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নারী। কোনো পুরুষ আসতে পারেন না। তাই বিভিন্ন বয়সি নারীরা প্রাণভরে মেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিনেছেন প্রসাধনীসহ নানা পণ্য সামগ্রী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই মেলা। বিগত কয়েক যুগ ধরে এই অঞ্চলের নারীদের জন্য মেলাটির আয়োজন হয়ে আসছে।
মেলায় আসা সালমা, সুমাইয়া আক্তার, মুন্নী আক্তারসহ একাধিক নারী জানান, বাড়ির কাছে মেলা হওয়ায় সকালে একদফা এসেছি। বিকালে আরেক দফা মেলায় এসেছি। মেলা থেকে কিছু সাংসারিক জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। পাশাপাশি সন্তানদের জন্য নানা ধরনের খেলনা সামগ্রী কিনেছি। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান জানান, প্রত্যেক বছর চৈত্রের বারুনী তিথির দ্বিতীয় দিনে এখানে বউ মেলার আয়োজন করা হয়। তবে এবার তিথি অনুযায়ী মেলা হয়নি। রোজার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। তাই রোজার ঈদের পরপরই বৈশাখে মাসে এসে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বউ মেলায় এসে বিভিন্ন বয়সী নারীরা এসে নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনেছেন। এছাড়া এবার মেলা জাকজমকভাবে হওয়ায় সময়সীমা আরও দুয়েক দিন বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হিন্দু শাস্ত্র মতে, বারুনী তিথিতে এককালের প্রমত্তাখ্যাত করতোয়া নদীতে স্নানোৎসব করা হতো। এই তিথিতে এখানে স্নান করলে অতীত জীবনের সব পাপ মোচন করে দেন ইশ্বর। ইশ্বরের অপার কৃপা লাভ করা যায়। তাই উপজেলার গাড়ীদহ এলাকায় বহমান করতোয়া নদীতে স্নানোৎসবের আয়োজন করা হতো। যুগ যুগ ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবকে ঘিরে মেলাটি হয়ে আসছে। সেই থেকে এই মেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। মেলা ঘিরে এই অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। স্বজনদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গাড়ীদগ গ্রাম ও আশপাশের এলাকা। এলাবার প্র্রবীণ ব্যক্তি কেএম ওবায়দুর রহমান, আজমল হোসেন জানান, কবে থেকে এখানে স্নানোৎসব ও মেলা হয়ে আসছে তা সঠিক করে বলা মুশকিল। তবে অনুষ্ঠানটি যে শতবর্ষী তা ধারণা করা হয়। আর এখানে কয়েক যুগ ধরে বউ মেলা হয়ে আসছে বলেও জানান তারা।
