ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাবুড়া টমেটো বাজার

ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়

ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়

প্রায় ১০ হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা, লেবার, আড়ৎদার ট্রাক ও ট্রাক্টরের চালক হেলপারসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে দেশের অন্যতম টমেটো বাজার দিনাজপুরের গাবুড়া এখন জমজমাট। দৈনিক ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় ভোর ৬টা থেকে রাত পর্যন্ত কর্মমুখর গাবুড়া বাজার। এ বছর জেলার ১৩ উপজেলায় ১১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫০ হাজার মে. টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষক এখন টমেটো তুলতে ও বাজারে আনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনাজপুর সদর উপাজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের গর্ভেশ্বরী নদীর পাশে জমে উঠেছে দেশের বৃহত্তম টমেটো বাজার গাবুড়ায়। প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে টমেটোর কেনাবেচা, প্যাকেজিং আর ট্রাক-ট্রাক্টরে লোডিং করা। গতকাল শনিবার গাবুড়া টমেটো বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা আর লেবাররা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, গাজীপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আড়তদাররা এসে টমেটো কিনে ট্রাকে করে পাঠাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার সাড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে কৃষক বাজারে টমেটো বিক্রি করছেন। আড়তদাররা পাইকারদের কাছ থেকে টমেটো নিয়ে তা আবার মণপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছেন। দেখা যায় বিপুল প্লাস জাতের টমেটো মণপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, রানী জাতের মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকা, পভলিন সীড জাতের টমেটো বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে। তবে বাজারে রানী ও পভলিন সীড জাতের টমেটো আমদানি বেশি। লেবাররা প্রতি ক্যারেটে (প্লাস্টিকের ঝুলি) ২৭ কেজি করে টমেটো প্যাকিং করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে। ট্রাকপ্রতি সাড়ে ৫০০ থেকে ৩২০ ক্যারেটের টমেটো পাঠানো হচ্ছে।

গাবুড়া টমেটো বাজারে কর্মরত ১০ হাজার মানুষের মধ্যে প্যাকিং ও ট্রাকে লোডের জন্য নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৭ হাজার দিনমজুর। দৈনিক ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব লেবার কাজ করছেন। টমেটো বাজারে ২ শতাধিক আড়তে লেবার প্রায় ৫ হাজার প্রতি নিয়ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। বড় ট্রাকে সাড়ে ৫০০ ও মাঝারি ট্রাকে ৩২০ ক্যারেট বোঝাই টমেটো লোড করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টমেটো বাজারের ইজাদার ও শেখপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম মণপ্রতি ইজারা গ্রহণ করছেন ১৫ টাকা। প্লাস্টিকের ঝুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। মণকে মণ পুরোনো পেপার দিয়ে এসব ক্যারেটে থরে থরে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন জাতের টমেটো। আড়তদার আরিফুল, অশোক, জগদীশ, রফিকুল ও মজিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ৩ মাসব্যাপী এ টমেটো বাজার চলবে আগামী জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এর মধ্যে দিনাজপুরে উৎপাদিত বিশেষ করে সদর উপজেলা, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ ও বিরল উপজেলার সিংহ ভাগ টমেটো গাবুড়া বাজারের মাধ্যমে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, এ মৌসুমে আবহওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার প্রায় ১১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার মে. টন। দিন দিন এখানকার কৃষক টমেটো আবাদে ঢুকছেন। বিভিন্ন জাতের মধ্যে কৃষকেরা নাবি, বিপুল প্লাস, রানী, পভিলিন সীড জাতের টমেটো আবাদে বেশি উৎসাহিত। আবহওয়া ভালো থাকায় এবার রোগবালাই ছিল খুবই কম। তাছাড়া মাঠ পর্যায় কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেছেন বলে উপ-পরিচালক জানান। টমেটো পচনশীল পণ্য হওয়ায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়েও চিন্তাভাবনা করছেন।

দেশের অন্যতম টমেটো বাজার গাবুড়ায় এখন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। বাজারে আশা দেশের বিািভন্ন স্থানে পাইকারদের জন্য থাকা এবং খাওয়ার হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে যে কোনো সমস্যা সমাধানে ইজারাদারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার, আড়ৎদার ও ট্রাক চালক ও লেবারদের। তবে কয়েকজন লেবারের সাথে আলাপ করলে তারা মজুরি কম বলে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পরিশ্রম করে আড়তদারদের কাছে পাই সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যা বর্তমান বাজারে পোশায়না। আগামী দেড় মাস গাবুড়া টমেটো বাজারের কেনা-বেনাকে কেন্দ্র করে এখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে বলে তাদের বিশ্বাস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত