ইরি-বোরো ধানকাটা শুরু

বাম্পার ফলনে কৃষক খুশি

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। ধান কাটা, মাড়াই ও রোদে শুকানোসহ নানা কাজে ব?্যস্ত সময় পার করছে কৃষক-কৃষানিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। ধান কাটা, মাড়াই ও রোদে শুকানোসহ নানা কাজে ব?্যস্ত কৃষক-কৃষানিরা। গতকাল শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কৃষক ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধে?্য পুরোপুরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে লক্ষ?্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৬ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রিড ৮ হাজার ৯১০ হেক্টর, উফসি ৭ হাজার ৪৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষক। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামের স্মার্ট কৃষক আ. সালাম, বর্গাচাষি জমির উদ্দিন, কাদের মিয়া ও আব্দুল মজিদ বলেন, একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। এক বিঘা জমির ধান কাটতে ও মাড়াই করতে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়াও এক বিঘা (৩২ শতাংশ) জমিতে চারা রোপণ থেকে কাটা মাড়াই পর্যন্ত যত টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া গেলে কিছু লাভের মুখ দেখা যাবে। অপর দিকে বিভিন্ন এলাকার কৃষক জানান, আমরা ব্রি-২৮সহ বিভিন্ন জাতের চিকন ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে জমির অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ তো উঠবেই না বরং লোকসানের মুখে আছি। ধানে নেক ব্লাস্টে আক্রান্তের বিষয়ে জানত চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার ভৌমিক বলেন, নেক ব্লাস্ট এই উপজেলায় ০.৯ হেক্টর জমিতে দেখা যায়। আমরা শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের খোঁজখবর রেখেছি এবং সময়মতো সার কিটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। আবহাওয়া ভালো আছে আশা করি সঠিক সময়ে ধান কাটা শেষ হবে।

শালিখা (মাগুরা) : মাগুরার শালিখায় মাঠে মাঠে পাকা ধানের সমারোহ। দিগন্তজুড়ে চলছে সোনালি ধানের দোলা। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্নে কৃষকের মুখে হাসির বন্যা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৮০০ হেক্টর বেশি। কৃষিপ্রধান এই উপজেলার শতকারা ৯০ ভাগ কৃষক ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে মাঘ মাসের মাঝ পর্যন্ত এই ধান রোপণ করা হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় সব স্থানে পেকে গেছে অধিকাংশ জমির ধান। কৃষক এখন পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। উপজেলার সাতনফুরিয়া গ্রামের কৃষক মইনুল হোসেন বলেন, দাম ও আবহাওয়া ভালো থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি ধান চাষ হয়েছে। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি। মাথাপিছু শ্রমিককে দেয়া লাগছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সৌমেন মণ্ডল বলেন, সরকারি সহযোগিতা ও কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কারণে কৃষকদের মধ্যে ধানচাষে আগ্রহ বেড়েছে। পানির অভাব ও ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন পাব বলে আশা করছি। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে লাভবান হয় সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেখানেই দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এই ধান ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দলীয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এলাকার কোথাও মাজড়া পোকার আক্রমণ দেখা দেয়নি। ফলে আমরা আশা করছি, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।