সমন্বিত চাষে লাভবান কৃষক

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

বছর বছর একটি ফসলের দিকে না ঝুঁকে চাষিদের মাঝে সমন্বিত চাষাবাদের আগ্রহ বাড়ছে। সমন্বিত চাষাবাদের ফলে চাষিরা সারা বছরই অর্থ আয় করতে পারছেন। বিভিন্ন ফল ও ফসলের আলাদা দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। নওগাঁয় এখন সারা বছরই বিভিন্ন ফল ফসলের দেখা মিলছে।

জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে খোজাগাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ। মাধ্যমিক পাসের পর পড়াশোনার গন্ডি চুকিয়ে কৃষিতে মনোনিবেশ করেন। বাবার সামান্য জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। যেখানে ধান, পাট ও শাক-সবজির আবাদ করতেন। তবে ৩ বছর থেকে কৃষি অফিসের পরামর্শে চার বিঘা জমিতে সমন্বিত চাষাবাদ শুরু করেন। তার বাগানে তাইওয়ানসহ বিভিন্ন জাতের আম, পেয়ারা, বরই, কমলা ও মাল্টাসহ প্রায় ৮-১০ ধরনের ফলের গাছ আছে। এরই মধ্যে বরই থেকে হারভেস্ট করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর নতুন ফসল চিয়া সিড আবাদ করেছেন।

উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের চিয়া সিড চাষে তাকে উদ্বৃদ্ধ করে। তারা নিজ থেকেই যোগাযোগ করে সার্বিক সহযোগিতা করেছে।

চাষি আব্দুর রউফ বলেন, গত ৩ বছর আগে চার বিঘা জমিতে সমন্বিত প্রজেক্ট করেছি। যেখানে ফলের গাছ আছে। আগে ধান, পাট ও শাক-সবজির আবাদ করতাম। উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। চাষাবাদের জন্য ৫০০ গ্রাম বীজ দিয়েছিল। তা দিয়ে এক বিঘাতে আবাদ করা হয়। যা সরিষার মতোই একই সময়ে চাষাবাদ করা যায়। বিঘাতে খরচ প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন প্রায় ১০০ কেজির কথা বলা হয়েছিল। তবে ৮০ কেজি ফলন হলেও লাভ। তবে মাড়াই করার ধরনটা একটু ঝামেলা। রোদে শুকিয়ে হাত দিয়ে মাড়াই করতে হয়। মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করা হলে বাতাসের সঙ্গে উড়ে যাবে। বাজারে ১ হাজার টাকা কেজি। সে হিসেবে ৮০ কেজির দাম ৮০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে ৬০ হাজার টাকা থাকবে। এটা শরীরের জন্য উপকারি। যদি কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, বিশেষ করে বাজারজাত তাহলে আগামী বছরে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করবে।

তিনি বলেন, সমন্বিত বাগান করার উদ্যেশ যেখানে সব ধরনের ফল ও ফসল থাকবে। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা হবে। ভালো দাম পাওয়াসহ লাভবান হওয়া যাবে। আমাকে দেখে অনেকেই উদ্বৃদ্ধ হবে।

খোজাগাড়ী গ্রামের কৃষক নিজামুল বলেন, আমাদের এলাকায় বা উপজেলায় এটা একটা নতুন জাত। বাজারজাত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে এটা কেমন লাভজনক। যদি বাজারজাত ভালো হয় আমরা চাষাবাদে আগ্রহী হবো। কারণ চাষ করলাম বাজারজাত করা যাচ্ছে না, তাহলে তো আমাদের লোকসান হবে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষি অফিস কাজ করলে কৃষকদের জন্যও সুবিধা হবে।

একই গ্রামে কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আব্দুর রউফ প্রতিবেশী ভাতিজা হচ্ছে। তিনি একটি সমন্বিত বাগান করেছে। সেখানে এবার চিয়া সিড এর আবাদ করে। আগে কখনও এ ফসলের নাম আমরা শুনিনি। শুনেছি যে সময় সরিষার চাষাবাদ হয়। একইভাবে সরিষার আবাদের মতোই পরিচর্চা। তবে খরচটা তুলনামূলক বেশি। খরচ বেশি হলে সমস্যা নেই। যদি অন্যান্য ফসল থেকে দাম ভালো হয় এবং লাভবান হওয়া যায়, তাহলে আমরা আগামীতে এ ফসল চাষাবাদে আগ্রহী হবো।