অশান্ত বান্দরবান, পর্যটনে ধস

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের রুমায় কেএনএফ আর নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে দুই সেনা সদস্যসহ ১২ জন নিহত হন। পাহাড়ি এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতায় অশান্ত হয়ে উঠেছে বান্দরবান জেলা। সরকারিভাবে এখনও তিন উপজেলায় পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে ধস নেমেছে এ জেলার পর্যটন শিল্পে। হোটেল-মোটেলগুলোতে নামমাত্র পর্যটকের অবস্থান। এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যদের অর্থনৈতিক অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগে এই জেলায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কুকিচিনের অস্তিত্ব থাকলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে তারা তৎপরতা শুরু করে। প্রায়ই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বান্দরবানের হানাহানির নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় সশস্ত্র বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। এদের মধ্যে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জনসংহতি সমিতি (জেএসএস সংস্কার), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক), মগ পার্টি ও কেএনএফ অন্যতম। বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় কেএনএফের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সীমান্তবর্তী রুমায় কেএনএফ প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলেছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গ্রুপের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আটজন কেএনএফ সদস্য নিহত হওয়ায় তারা কিছুটা পিছু হটেছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রথম কেএনএফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর রুমা উপজেলার মৌয়াছিপাড়ায় গোলাগুলি হয়। এতে এক সেনাসদস্য নিহত হন। অক্টোবর থেকে যৌথ অভিযানে ২ কেএনএফ সদস্য এবং কেএনএফের গুলিতে মগ পার্টির তিনজন নিহত হন। গত ১২ মার্চ কেএনএফের গুলিতে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হন এবং দুই সেনাসদস্য আহত হন। ৭ এপ্রিল ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গ্রুপের গুলিতে কেএনএফের আট সদস্য নিহত হন। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, কেএনএফের ওপর সার্বিকভাবে নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। এরই অংশ হিসেবে কেএনএফ অধ্যুষিত রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এদিকে বান্দরবানে পর্যটন শিল্পে দুরবস্থা সম্পর্কে আবাসিক হোটেল হিলভিউর ব্যবস্থাপক পারভেজ আহাম্মেদ বলেন, ১ মে বন্ধের দিনেও কোনো পর্যটক নেই। আমাদের হোটেলে ১০০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র ৩০টি বুকিং আছে। এই দিনে অন্য বছরগুলোতে পর্যটকদের কক্ষ দিতে হিমশিম খেতে হতো। বান্দরবানের আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেএনএফ ঝামেলার কারণে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় বান্দরবানের পুরো অর্থনীতিই থমকে গেছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যখন যেটা করা দরকার, সেটাই করছি।