থমকে আছে মনিমালার জীবনের চাকা

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ

জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা মনিমালা (৬২)। জীবনের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত ঘুরিয়ে চলছেন পায়ে চালিত ভ্যানের চাকা। পুরুষের মতো ভ্যান চড়ে চালাতে না পারলেও ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মনিমালা মাল বোঝাই ভ্যানটি দুই হাতের সাহায্যে টেনে নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে, এক হাট থেকে অন্য হাটে। ভ্যানের চাকা না ঘুরলে সংসারের চাকা যে ঘোরে না তার। একদিন মাল বিক্রি বন্ধ থাকলে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় তার পরিবারকে। অদম্য ইচ্ছার জোরে ভ্যান চালিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত রোজগারে চলা একটা পরিবারের প্রধান হিসেবে মনিমালা সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারপরও প্রায় ২৫ বছর ধরে ভ্যানে মাল বয়ে গ্রামগঞ্জে হাট-বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। বলছিলাম, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আশুতোষ কুমার পালের স্ত্রী মনিমালার সংগ্রামী জীবনের কথা। নলডাঙ্গা দুর্গাপুরে ছেলে- বৌমার সঙ্গে পরের জমিতে ঘর করে থাকলেও মনিমালা কালীগঞ্জ পৌরসভার শিবনগর এলাকার একজন ভোটার। ২৫ বছর হলো স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। তারপর থেকেই সংসারের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটান মনিমালা। এরই মধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শিবনগর এলাকায়। ছেলেকেও করিয়েছেন বিয়ে। নলডাঙ্গা বাজারের একটি ভাংড়ি দোকানের কাজ করে ছেলে একা সংসার চালাতে পারে না। যে কারণে মনিমালা ভ্যানে করে বিভিন্ন হাটে ও গ্রাম্য বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন। শ্রমজীবী ষাটোর্ধ্ব মনিমালা আক্ষেপ করে বলেন, আমি একজন মহিলা মানুষ হয়েও বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করি। মাল বোঝাই ভ্যান টানতে খুব কষ্ট হয় আমার। কিন্তু অন্য কোনো উপায় যে নেই আর আমার হাতে। নিজের বলে কিছুই নেই; মাথাগোঁজার ঠাঁইও নেই আমার। শুধুমাত্র বিধবা ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আমি পাই না। হাট-বাজারে একটা স্থায়ী দোকান থাকলে আমাকে আর ভ্যান ঠেলে মাল বিক্রি করা লাগত না।