ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ছানার পায়েসের কদর দেশজুড়ে

ছানার পায়েসের কদর দেশজুড়ে

শেরপুরের ছানার পায়েসের কদর দেশজুড়ে। বিচিত্র খাবারের মধ্যে শত বছরের সুখ্যাতি আছে শেরপুরের এই পায়েসের। যে কোনো উৎসব আয়োজনে ভোজন রসিক বাঙালির খাদ্য তালিকায় ছানার পায়েস বহন করে এক বিশেষ ঐতিহ্য। দুগ্ধজাত আদর্শ এ খাবার ছেলে-বুড়ো সবার পছন্দ।

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ১০০ বছর আগে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম এ পায়েস তৈরি হয়। সেসময়কার জমিদাররা ঘোষপট্টিতে বানানো ছানার পায়েস বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য জমিদারের কাছে উপঢৌকন হিসেবেও তারা এই পায়েস পাঠাতেন।

স্থানীয়রা জানান, বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, যে কোনো উৎসব আয়োজনে অতিথি আপ্যায়নসহ সবখানেই ছানার পায়েসের মর্যাদা সবার ওপরে। এসব অনুষ্ঠানে ছানার পায়েস ছাড়া যেন জমেই না।

মিষ্টির দোকানদাররা জানান, বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, বিয়ে ও পূজাসহ যে কোনো উৎসবের পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষদের জন্য কিংবা রোগী দেখতে গেলে পথ্যের তালিকায় অবশ্যই ছানার পায়েস থাকে। যুগ যুগ ধরেই বাঙালির অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির প্রচলন। আর কোনো শুভ কাজে মিষ্টিমুখ করানো বাঙালি সংস্কৃতি। তবে মিষ্টির মধ্যে অন্যতম ‘ছানার পায়েস’। আমাদের শেরপুরের ছানার পায়েসের খ্যাতি দেশজুড়ে। শেরপুরের ছানার পায়েস দেশসেরা। বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঘুরতে এলে শেরপুরের ছানার পায়েস সঙ্গে নিয়ে যান। বিশেষ করে গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, রাজার পাহাড়, পানিহাতা, অর্কিড গার্ডেনে বেড়াতে এসে ছানার পায়েসের স্বাদ নিতে ভুলেন না ভোজন রসিকরা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত খাবারের দেশ-বিদেশে পরিচিতির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভাল: টেস্ট অফ বাংলাদেশ’ নামে এক বিশেষ মেলা হয় রাজধানী ঢাকার বনানী কামাল আতাতুর্ক পার্কে।

এই মেলা গত ৪ মে উদ্বোধন হয়ে চলে গতকাল শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই কান্ট্রি ব্রান্ডিং একটি অসাধারণ আয়োজন ছিলো। এই মেলায় ৩৯টি পণ্যের মধ্যে শেরপুরের ছানার পায়েস ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চালের আলাদা দুটি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রতিনিধি দল। শেরপুরের এই পণ্য দুইটি রাজধানীবাসীসহ মেলায় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে আসা দেশ-বিদেশের দর্শকদের নজর কেড়েছে, মন ছুঁয়েছে সবার।

সারা দেশ ঘুরে ঘুরে এসব খাবারের স্বাদ নেয়া অধিকাংশ মানুষের পক্ষে অসম্ভব, তাছাড়া এখনো দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত সব পণ্য অনলাইনে পাওয়া যায় না। তাই একই মাঠে সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবারের সমাহার থাকায় দেশ-বিদেশের মানুষের ঢল নামে। বিশেষ করে শেরপুরের ছানার পায়েস ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চালের কদর যেন আকাশ চুম্বী।

জানা গেছে, ওই মেলা সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে, কিন্তু ভিন্ন মাত্রার শেরপুরের পণ্য দুইটি অপেক্ষাকৃত আলাদা মানের হওয়ায় এবং মানুষের সমাগম বেশি থাকায় প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যেই স্টলে সাজিয়ে রাখা ছানার পায়েস ও তুলশীমালা চাল বিক্রি হয়ে যায়।

শেরপুরের ছানার পায়েস নিয়ে অংশ গ্রহণকারী দলনেতা ‘আওয়ার শেরপুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা ওই মেলায় আশার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, একই মাঠে সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবারের সমাহার থাকায় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে আসা রাজধানীবাসীসহ দেশ-বিদেশের দর্শকদের নজর কাড়ে, ছুঁয়ে যায় সবার মন। মেলায় প্রতিদিন মানুষের ঢল নামে। এই মেলায় শেরপুরের ছানার পায়েস ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চাল, খুলনার চুই ঝালের মাংস, চট্টগ্রামের মেজবান, ঢাকার বিখ্যাত হাজীর বিরিয়ানি, বিউটির লাচ্ছি, বাকরখানি, নান্নার বিরিয়ানি, বিসমিল্লাহর চাপ, মোস্তাকিমের চাপ, বোবার বিরিয়ানি, বরিশালের গুটিয়ার সন্দেশ, বগুড়ার দই, কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাগেরহাটের চিংড়ি ও সুন্দরবনের মধু, যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা, মৌলভীবাজারের মনিপুরী খাবার, কক্সবাজারের সী ফুড, খাগড়াছড়ির বিখ্যাত ব্যাম্বো চিকেন, বান্দরবানের মারমা ফুড, উত্তর বঙ্গের প্যালকা, পিরোজপুরের সন্ধ্যা নদীর ইলিশ, সিলেটের পানসী রেস্টুরেন্টের আখনী বিরিয়ানি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডা, হরেক রকমের জুস, ফুসকা, আগুন পান ইত্যাদি ছিলো। এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, শেরাটন ঢাকা, হোটেল ওয়েস্টিন ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিখ্যাত বাংলাদেশি খাবারের সমাহার সবার নজর কেড়েছে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রাখা হয়েছিল বিখ্যাত বাউল শিল্পী কুদ্দুস বয়াতির গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নানা-নাতির সংলাপ, রয়েছে গম্ভীরা, কাওয়ালি, লালন সংগীতসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহির মুহাম্মাদ জাবের। টেস্ট অব বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন সাদেকুল আরেফিন। এই মেলোর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও মেলায় বসানো স্টলসমূহ পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত