ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটছে কৃষকরা

হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটছে কৃষকরা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটতে আগ্রহী কৃষকরা। ৪০ শতক জমির ধান কেটে মাডাই করে বাড়িতে নিতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৭০০০ হাজার টাকা, আর কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের ধান কেটে মারাই করে বাড়িতে নিতে খরচ হয় মাত্র ৩৫০০ শত টাকা। আর এসব ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিকের পরিবর্তে কৃষকরা ব্যবহার করছেন কম্বাইন হারভেস্টার নামে বিদেশি অত্যাধুনিক মেশিন। এতে শ্রমিক ছাড়াই অল্প সময় ও কম খরচে ধান কাটা ও মাড়াই করা যায় বলে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। চৌদ্দগ্রামে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে জমির ধান কাটতে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। চলতি মৌসুমে চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান পেকে যাওয়ায় ফসল কাটার সময় পার হতে চলেছে। স্থানীয় শ্রমিক স্বল্পতার কারণে উত্তর বঙ্গের শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল এ এলাকার কৃষি। সারা দেশে একযোগে ধান কাটা চলতে থাকায় চলতি মৌসুমে চাহিদামতো শ্রমিক আসেনি এলাকায়। এছাড়া রমজানের ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েও অনেকে ফেরেনি। শ্রমিক সংকট চরমরূপ ধারণ করেছে। এক মাস আগেও এখানে ৫০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যেত। এখন দুই বেলা খাওয়াইয়াও একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় ১২০০ টাকা। চাহিদার কারণে একসপ্তাহ পর্যন্ত আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন অনেকেই। বাড়তি পারিশ্রমিকে ধান কেটে ঘরে তোলার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসানের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষক। এ কারণেই হার্ভেস্টার চাহিদা বেড়ে গেছে। গত বছর চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ৫০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষি বিভাগের দেয়া চারটি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা শুরু হয়েছে। জমি থেকেই অল্প সময়ে ধান কাটা মাড়াই হয়ে যায়। প্রতি ৪০ শতক জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের কাছ থেকে ৩৫০০ টাকা নিয়ে থাকেন মেশিন মালিক। ৪০ শতক জমির ধান কাটতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই হারভেস্টার মেশিনে ক্ষেত থেকে মাড়াই শেষে বস্তা ভরে ধান ঘরে তুলতে পেরে খুশি কৃষকরা। অল্প সময়ে কম খরচে ধান মাড়াই ও খড়কুটা বাড়িতে তোলার সুযোগ পাওয়ায় হারভেস্টার মেশিনে ঝুঁকছে কৃষকরা। হারভেস্টারের মালিক কামাল হোসেন বলেন, মেশিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক ফোন আসছে, ধান কেটে শেষ করতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১২০০০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য চারটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেয়া হয়। এতে প্রতি ঘণ্টায় একটি মেশিন দিয়ে প্রায় ৬০ শতক জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। এতে প্রতি শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ৮৭ থেকে ৯৫ টাকা। পৌরসভা ফালগুন করা আবু জাফর বলেন, এ বছর আমরা ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে ধান কাটা হয়ে যায় এবং খরচও অনেক কম। কৃষক বেলাল হেসেন জানান হারভেস্টার মিশিনে ধান কেটে আমরা লাভবান হচ্ছি, উপজেলার হারভেস্টার মেশিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মেশিনের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। ধান উৎপাদনে সারের ও ওষুধের দাম বেশি, আবার মাঝে মাঝে ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ ঘটে, তা না হলে ফলন অনেক বেশি হতো। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় হারভেস্টার মেশিনে ধান মাড়াই করছেন কৃষকরা। একজন কৃষক ১০ শতক জমিতে ১১ মণ ধান পেয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যোবায়ের আহমদ বলেন, উপজেলায় গত বছর চারটি সরকারি ভর্তুকির কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে শ্রমিক ছাড়াই অল্প সময়ে ও কম খরচে ধান কাটা ও মাড়াই করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি। এ উপজেলায় রয়েছে শ্রমিকের স্বল্পতা। উত্তর বঙ্গের শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে চলে এ উপজেলার কৃষি। বর্তমানে শ্রমিকের শ্রম মূল্য অনেক বেশি। শ্রমিকের মাধ্যমে অধিক পারিশ্রমিকে ধান কেটে ঘরে তোলতে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসানে পড়তে হবে কৃষককে। তাই আমরাও চাই কৃষক হার্ভেস্টার ব্যবহারে আগ্রহী হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত