পানির স্তর নেমে অকেজো হাজার হাজার নলকূপ

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কোনো এলাকার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। টানা খরায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপে পানি না পাওয়ায় বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা তীব্র পানির সংকটে পড়েছেন। পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে পানির অভাবে উপজেলার অনেক কৃষিজমি অনাবাদি রয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ চলমান খরা ও অনাবৃষ্টি। শিগগির বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে তারা জানান।

বাঁশখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মধ্যে এ মাসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। উপজেলার গণ্ডামারায় ১৪০ থেকে ১৫০ ফুট, ছনুয়ায় ১৩০ থেকে ১৫০ ফুট, কাথরিয়া, বাহারচড়া, কালীপুর, সরল, খানখানাবাদ ও পৌরসভা এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি স্বাভাবিক স্তর থেকে ৬০ থেকে ৭০ ফুট নিচে নেমে গেছে। যার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাঁশখালীতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। বোরো চাষে প্রচুর পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে বাঁশখালীর অধিকাংশ এলাকায় বর্তমানে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকায় সাধারণ জনগণ নানাভাবে সমস্যায় দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

ছনুয়া এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, সমুদ্রতীরে তার ৫০ শতক জমিতে এবার সেচের অভাবে চাষাবাদ করতে পারেননি। অগভীর নলকূপে পানি না ওঠায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাঁশখালী পৌরসভার প্যানেল মেয়র রোজিয়া সোলতানা রোজি জানান, গ্রামের বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। মোটরের মাধ্যমেও ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এলাকার অধিকাংশ পরিবার বাড়ি থেকে বেশ খানিক দূরের অন্য প্রতিবেশীর সাবমার্সিবল মোটর থেকে পানি এনে খাবার পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এদিকে প্রচণ্ড গরমে এখানকার জনজীবনও অচল হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে পৌরবাসীর পানির কষ্ট লাঘবে পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসা প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে পানির জন্য আর তেমন কষ্ট করতে হবে না পৌরবাসীকে।

বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদ বলেন, আমার এলাকায় কয়েকশ’ নলকূপ থাকলেও বর্তমানে তার বেশিরভাগে পানি না ওঠার কারণে সাধারণ জনগণ পানীয় জলের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি থাকার কারণে এখানকার জনগণের নলকূপের প্রচুর চাহিদা থাকলেও সে অনুসারে পাওয়া যায় না সরকারিভাবে। ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসাতে দেড় থেকে দুই লাখ প্রয়োজন পড়ে। ফলে বর্তমানে এ মৌসুমে অধিকাংশ নলকূপে পানি না ওঠার কারণে জনগণ নানাভাবে কষ্টের স্বীকার হচ্ছে পানি নিয়ে।

একই কথা বলেন, পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ী, কাথরিয়ার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। জানা যায়, বর্তমানে বাঁশখালীর পশ্চিমাংশের অধিকাংশ এলাকায় এক হাজার থেকে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ ফুট গভীরে গিয়ে পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক সময় পানির স্তর পাওয়া গেলেও এ মৌসুমে ৩-৪ মাস খাবার পানি পাওয়া অনেক দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বাঁশখালীর দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে আগের বসানো নলকূপগুলোতে এ মৌসুমে পানি উঠছে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গেলেও, বৃষ্টি হলে ভূগর্ভের পানির স্তর উঠে আসে। অনাবৃষ্টির কারণে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। তাছাড়া সরকারিভাবে পাইপসহ যে নলকূপ দেওয়া হচ্ছে, তাও সহজলভ্য নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ২৬টি করে মোট ৩৬৪টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া যায়। এত বড় উপজেলায় চাহিদা বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম। তবুও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাবমারসিবল ও গভীর নলকূপ পাম্প বরাদ্দ অনুসারে সরবরাহ করে যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছি।