শালিখায় লিচুর বাম্পার ফলন

দাম ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রব মিয়া, শালিখা (মাগুরা)

মাগুরার শালিখায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় খুশি বাগান মালিকরা। প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু বাগানের সংখ্যা। রসালো ফল লিচু অনেকের কাছে ‘রসগোল্লা’ হিসেবে পরিচিত। এবার মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় লিচু চাষিরা। উপজেলার জেলার প্রতিটি লিচু গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় লিচু। লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর এ উপজেলার লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এই উপজেলাতে লিচু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শালিখার বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল লিচু। ক্রেতাদের কাছে ভালোই কদর রয়েছে এসব লিচুর। বাজারে লিচুর কদর থাকায় দাম ভালো পাচ্ছে চাষিরা।

শুরু থেকে ফল ওঠা পর্যন্ত তিন ধাপে বিক্রি হয় লিচু বাগান। প্রথমে বাগান মালিকরা এর পরিচর্যা করে ফুল-গুটি আসার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তারপর বাগানগুলো আবার বিক্রি হয়। পরে বাগানে পূর্ণ লিচু হলে সেটা বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে।

জানা যায়, বিগত দুই-তিন বছরের মধ্যে এই বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। রোদের তাপ বেশি হওয়ায় এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় লিচুর আকার ছোট হয়েছে। তবে বাজারে লিচুর দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গাছ থেকে লিচু পেড়ে জড়ো করা হচ্ছে বাগানে। ব্যস্ত সময় পার করছে লিচু ব্যবসায়ীরা সেখানে চলছে ছোট বড় আর লাল সবুজ রঙের লিচু বাছাই। রসাল টসটসে লিচুগুলো বাছাই করে আঁটি বাঁধার কাজ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। রং আর লিচুর আকার অনুযায়ী বাধা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন আঁটিতে। ক্রেতাদের অতি আগ্রহের এই লিচু পরম যত্ন সহকারে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।

শালিখা উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের লিচু চাষি মো. সিদ্দিক মোল্যা জানান, এ বছর আবহওয়া ভালো থাকায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাতের না হওয়ায় লিচু কাঙ্ক্ষিত আকারের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়েছে। তবে অন্য বছরের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় লাভের আশা করছি। তিনি আরো বলেন, বাদুড়, কাক ও বুলবুলি পাখির উপদ্রপ থেকে লিচু রক্ষা করতে লোক দিয়ে পাহারা বসিয়েছি। বাজানো হচ্ছে বাঁশ কিংবা টিনের তৈরি বিশেষ বাজনা। রাতে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক বাতি। আমার বাগানে ৫২টি লিচু গাছ আছে, প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে লিচু ধরেছে। বাগান থেকে ১০০ লিচু ব্যবসায়ীরা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ি গ্রামের লিচু চাষি মো. কায়েম শিকদার জানান, আমার বাগানে ৪০টি লিচু গাছ আছে। এ বছর আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ফল ভালোই ধরেছে, ভালো দামে লিচু বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

সরেজমিন কথা হয় লিচু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সাথে। তিনি জানান, গেল কয়েক বছর লিচু ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। এবার তীব্র গরম পড়লেও অনেকটাই লিচুর অনুকূল আবহাওয়া ছিল। ফলে অন্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি ফলন পাওয়ার আশা রয়েছে। আকার ভেদে ১০০ লিচু ১০০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এবার চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল ও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমি ফলের মধ্যে লিচু একটি লাভ জনক ফল। বর্তমান বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে লিচুর চাষা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লিচু বাগানিদের সহযোগিতা করেছি। এ বছর ৪৩ হেক্টর জমিতে ১৪৭টি বাগানে

লিচুর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে।