পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ ও জাহাজের নাটবল্টুর জমজমাট ব্যবসা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ ও জাহাজের নাটবল্টু বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় গড়ে উঠেছে ‘পুরোনো মেশিন পট্টির’ বাজার। দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছেও চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন মালামাল কিনতে। প্রতিদিন এ বাজার থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। তবে মৌসুমে অর্থনৈতিক লেনদেন আরো ছাড়িয়ে যায়। এ পট্টিতে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ২০০ শ্রমিকের।

নওগাঁ শহরে লিটন ব্রিজের ওপর ১৯৮৫ সালে পুরাতন শ্যালো মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও জাহাজের নাটবল্টু বিক্রি শুরু হয়। সে সময় হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী শুরু করেন এ ব্যবসা। পরবর্তী সময় ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরের মাঝখানে কাঁচাবাজারের পাশে ‘পুরোনো মেশিন পট্টির’ বাজার গড়ে ওঠে। যা ভাঙড়ি পট্টি নামেও পরিচিত। ব্যবসা ভালো হওয়ায় বছর বছর চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ পট্টিতে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে। যেখানে সবধরনের মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও নাটবল্টু পাওয়া যায়। কোনো ক্রেতা এ পট্টিতে কিছু কিনতে আসলে তাকে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে না। নতুনের তুলনায় পুরোনো এসব যন্ত্রাংশের দাম তুলনামূলক কম এবং মান ভালো হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম থাকে এ পট্টি। প্রতিদিন এ পট্টিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। তবে বোরো ও আমন ধানের মৌসুমে অর্থনৈতিক লেনদেন আরো ছাড়িয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান- ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে জাহাজের পুরোনো নাটবল্টু কিনে নিয়ে এসে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। গত বছর এসব নাটবল্টু ৭০-৮০ টাকা কেজিতে কেনা হলেও এ বছর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর মেশিনারি যন্ত্রাংশ পিস হিসেবে বিক্রি হয়। তারও দাম বেড়েছে। পুঁজি সংকটে পড়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ীদের। লভ্যাংশ কমে গেছে তাদের।

শ্রমিক রমজান আলী বলেন, গত সাত বছর ধরে এ পট্টিতে কাজ করছি। আগে মজুরি কম থাকলেও বর্তমানে সপ্তাহে ২ হাজার টাকা মজুরি পাই। আমার মতো এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ২০০ শ্রমিকের। এ মজুরিতে জীবন জীবিকা চলছে। খুচরা ব্যবসায়ী মানিক বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পুরোনো জাহাজের নাটবল্টু কেজির দরে কিনে নিয়ে আসা হয়। এরপর পরিষ্কার করে চকচকে করা হয়। নাটবল্টু আগে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে আসতাম। কেজিতে ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করতাম। বর্তমানে দাম বেড়ে এখন ১৪০-১৫০ টাকা কেজি হয়েছে। দাম দ্বিগুণ হওয়ায় পুঁজি সংকটে পড়েছি।

চৌধুরী বিয়ারিং হাউজের স্বত্বাধিকারি আল মামুন বলেন, জাপান ও কোরিয়া বিয়ারিংয়ের দাম ১২৫-১৩০ টাকা। ওই মডেলের পুরোনো বিয়ারিং বিক্রি হয় মাত্র ২৫-৩০ টাকায়। শ্যালোমেশিন, ভ্যান ও রিকশায় ব্যবহৃত হয়। চালক ও কৃষকরা স্বল্পমূল্যে কিনে উপকৃত হয়। আমাদের ব্যবসাও মোটামুটি ভালো হয়।

জিহাদ মেশিনারিজ এর স্বত্বাধিকারি ওবায়দুল হক বলেন, যন্ত্রাংশের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে গেছে। আগে অল্প পরিমাণ বিক্রি হলেও লাভ ভালো ছিল। এখন বেশি পরিমাণ বিক্রি হলেও লাভ কম আসে। যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় ব্যবসা মন্দা চলছে। মৌসুমে ব্যবসা ভালো হলেও অমৌসুমে খুবই সীমিত।

জয়পুরহাট থেকে পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ কিনতে আসেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব ধরনের মালামালা নওগাঁয় পাওয়া যায়। অন্যান্য জেলা থেকে এখানে দামেও কিছুটা কম পাওয়া যায়। এখান থেকে মালামাল কিনে নিয়ে কিছুটা লাভে বিক্রি করা যায়।

নওগাঁ নাটবল্টু পৌর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আপন হোসেন বলেন, এ পট্টিতে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে। সারা বছরই পুরাতন শ্যালো মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও নাটবল্টুর চাহিদা থাকে। প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। তবে বোরো ও আমন ধানের মৌসুমে শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ ও নাটবল্টুর চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার লেনদেন ছাড়িয়ে যায়।