ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনাবৃষ্টিতে আমের আকার ছোট লোকসানের আশঙ্কা

এ বছর আম উৎপাদনের খরচ বেশি হচ্ছে।
অনাবৃষ্টিতে আমের আকার ছোট লোকসানের আশঙ্কা

কয়েক বছরের ব্যবধানে উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁয় বেড়েছে আমবাগান। বিভিন্ন জাতের সুমিষ্ট আম চাষ হচ্ছে এ জেলায়। তবে এ মৌসুমে শুরু থেকেই অনাবৃষ্টির কারণে আম চাষিদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমের পরিচর্চা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মিলছে না বৃষ্টির দেখা। অনাবৃষ্টির কারণে আম ঝরে পড়ছে। সেইসঙ্গে আমের আকারও ছোট হয়ে আসছে। আম চাষিরা কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার আশায় শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। সাধারণত গুটি জাতের আম আগেই পাকতে শুরু করে। আগামী ২২ মে গুটি আম পাড়া শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আম পাড়া হবে।

বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার আংশিক এলাকায় একসময় বৃষ্টিনির্ভর একটিমাত্র ফসল আমন ধান হতো। তবে এখন ধান ছেড়ে মানুষ আম বাগানে ঝুঁকছেন। এ মৌসুমে খরায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আম বাগানে সেচ দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বোঁটার রস শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে। সেইসঙ্গে আমের আকারও ছোট হয়ে আসছে। এখনো দেখা মিলেনি বৃষ্টির। এ অবস্থায় আম রক্ষায় চাষিরা দূরদূরান্ত থেকে পানি নিয়ে এসে গাছে স্প্রে করছেন। আম ঝরেপড়া রোধে ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে আম সংগ্রহ শুরু হবে।

সাপাহার উপজেলার লালচান্দা গ্রামের আম চাষি আলাউদ্দিন বলেন, ১৬ বিঘা জমিতে বারী-৪ ও আম্রপালি জাতের আমবাগান রয়েছে। অনাবৃষ্টিতে এ বছর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। গত ৪০ বছরে এমন খরা ও অনাবৃষ্টি দেখিনি। বরেন্দ্র এলাকায় পানি স্বল্পতা। তারপরও যতটুকু সম্ভব দূর থেকে পানি নিয়ে এসে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আর পানি নেই। আম প্রচুর পরিমাণ ঝরে গেছে। আমের পরিমাণও অল্প। আমের আকারও ছোট হয়ে গেছে। লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই গ্রামের আম চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আম ঝরেপড়া বন্ধ করতে ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রচণ্ড খরায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আম্রপালি আমের আকার গত বছর প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম ছিল। এবছর ১৫০ গ্রামের মতো হয়েছে। আকার ছোট হয়েছে এবং ফলনও কম হচ্ছে। গত বছর ৬০টি আম দিয়ে এক ক্যারেট পুরণ হয়েছে। এবছর প্রায় ৮০টি আম দিয়ে এক ক্যারেট পুরণ হবে। ফলন কম খরচ বেশি পড়ছে। এ বছর শুরু থেকে আমের দামও বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ভাতকাড়া গ্রামের আমচাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনাবৃষ্টিতে দূর থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে। শ্রমিক ও কীটনাশকের দামও বেশি। এ বছর আম উৎপাদনের খরচ বেশি হচ্ছে। জমি ইজারাসহ আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে বাজারজাত করতে এ বছর বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। অনাবৃষ্টিতে আম চাষিদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, এ উপজেলায় ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে ওঠেছে। হেক্টরপ্রতি ১৪ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। প্রচণ্ড খরায় আম কিছুটা ঝরে পড়ছে। আমের আকার ছোট হয়ে গেছে। সকালে বাগানে পানি সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যদি সেচ দেয়া না যায় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত