সাপাহারে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছে ‘বৈকালিক চিকিৎসাসেবা’। এ সেবার মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে স্বল্প খরচে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে জেলার সীমান্তবর্তীর বাসিন্দারা। তবে এ সেবার কার্যক্রমটি সাড়া জাগানোর জন্য আরো প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালে এ সেবা চালু হওয়ায় চিকিৎসার খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে একটি জেলা হাসপাতাল ও চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বৈকালিক স্বাস্থ্য প্রদান শুরু হয়েছে। গত ৩০ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরমধ্যে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। স্বাস্যসেবার পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে চলে ৬টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসাররা চিকিৎসা করছেন।

জেলা শহর থেকে সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র ভূমি সাপাহার উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ উপজেলার মানুষ এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। ভালো সেবা হলে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল অথবা রাজশাহী বা বগুড়ায় যেতে হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হলে জেলা শহর বা জেলার বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বা বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই বেশি। তবে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হওয়ায় উপকার পাওয়া শুরু করেছে উপজেলাবাসী।

উপজেলার ইলিমপুর গ্রামের গৃহবধূ রেহেনা বেগম বলেন, হাসপাতালের বৈকালিক চিকিৎসা বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ও লোকমুখে শুনেছি। বাহিরে যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো হয় অনেক সিরিয়াল দিতে হয় এবং ফি বেশি লাগে। বৈকালিক চিকিৎসায় স্বল্প ফিতে সহজেই নিরিবিলি পরিবেশে ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। সেবা ভালো পেয়েছি সুবিধা হয়েছে।

উপজেলা সদরের গুডাউনপাড়া এলাকার আসাদুজ্জামান আসাদ জরুরি বিভাগে আসছিলেন। হাসপাতাল থেকে তার বাসার দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। তিনি বলেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার কথা জানি। তবে হাসপাতালে স্বল্প ফিতে (টাকা নিয়ে) রোগী দেখা হয় এমন বিষয় আমার জানা নেই। যদি স্বল্প ফিতে রোগী দেখানো হয় সবার জন্যই সুবিধা হয়। মানুষ আর বাহিরের ক্লিনিকে বা ডাক্তারের চেম্বারে বেশি ফি দিয়ে না দেখিয়ে হাসপাতালে দেখাবে। এতে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মানুষ লাভবান হতে পারবে। হাসপাতলের প্রধান ফটকের পাশে সাদিয়া ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন বলেন, বৈকালিক সেবা চালু হয়ে মানুষের সুবিধা হয়েছে। স্বল্প টাকায় মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে। যারা বুঝে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। যারা এখনো বিষয়টি বুঝতে পারেনি তারা বাহিরে চিকিৎসক দেখাচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে হয়। এটা নিয়ে বেশি বেশি প্রচার-প্রচারণা করা দরকার।

মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আলমগীর কবীর বলেন, বহির্বিভাগে অনেক রোগীর ভিড় হয়। যার কারণে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতে পারেন না। বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আর সেবার মনমানসিকতা নিয়ে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের আরো কাছে পৌঁছে দিতে সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা সেবার কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবার বিষয়ে অনেকে অবগত না থাকায় শুরুতে রোগী কম আসে। তবে বর্তমানে প্রচার-প্রচারণা থাকায় স্বল্প ফিতে এ সেবা নিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্প খরচে হাসাপাতালে দেয়া হয়ে থাকে। বলা যায় নতুন ধারণা হিসেবে ক্রমবর্ধমান ভালো সেবা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদী।