ঘন ঘন লোডশেডিং। নেই নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। অপরদিকে টয়লেটের দুর্গন্ধ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় মশার উপদ্রব। এমন অবস্থা নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। দূর্ভোগ পোহাতে হয় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রোগীদের কোনো অভিযোগ নেই।
জানা গেছে, জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলা। জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এ উপজেলা। ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ জনবসতির জন্য রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ছিল নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা। জেনারেটরটি পুরাতন হওয়ায় প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বছর অনাবৃষ্টি। সীমান্তের বরেন্দ্র উপজেলায় বইছে প্রচণ্ড তাপদাহ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। সেইসঙ্গে রোগীদেরও কষ্ট বাড়ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে স্বজনরা হাতপাখার বাতাস করছেন। কিন্তু ফ্যানের মতো আরাম হচ্ছে না। রাতে ওয়ার্ডগুলোতে যেন এক ঘুটঘুটে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলোকিত রাখতে কেউ চার্জার বা মোবাইলের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে রাখেন। যেন অন্ধকারে জোনাকি পোকার আলো। সন্ধ্যার পর আবার শুরু হয় মশার উপদ্রব। হাসপাতালে থেকে কয়েল জ্বালানো নিশেধ রয়েছে। অপরদিকে টয়লেটে বেসিনগুলো ভাঙা এবং মেঝেও অপরিষ্কার। টয়লেটের দুর্গন্ধে রোগীরাও বিরক্ত। এতসব সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হলেও হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
উপজেলার টেংড়াকুড়ি গ্রামের চিকিৎসা নিতে আসা সৈকত বলেন, তিন দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ে জীবন অতিষ্ঠ। হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। আধাঘণ্টা একঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ যায় আর আসে। দিনে অন্তত ১০-১২ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। রাতে অনেক সময় অন্ধকারে থাকতে হয়।
আশ্রন্দ গ্রামের গৃহবধূ বিলকিস বলেন, টাইফয়েড ও বমি নিয়ে ৪ দিন হলো ছেলে হানজালাকে ভর্তি করেছি। হাসপাতলে এখন বিদ্যুতের বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। বিদ্যুৎ গেলে গরমে আরো বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
চৌধুরী পাড়ার বাসীন্দা বয়জ্যেষ্ঠ অজিফা বলেন, স্বামী অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের মেঝে ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। যারা পরিষ্কার করতে আসে যেনতেনভাবে পরিষ্কার করে চলে যায়। টয়লেটের পাশে বেডে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। টয়লেটের এতো গন্ধ। রোগী যেন আরো অসুস্থ হয়ে যায়। টয়লেটের অবস্থা ভাঙাচোরা ও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। বমি হওয়ার মতো অবস্থা। এদিকে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব, কয়েল জ্বালানো নিশেধ। উপজেলা সদরের বাসিন্দা বয়জ্যেষ্ঠ আব্দুস সাত্তার বলেন, শ্বাস কষ্ট সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছি। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর ভ্যাপসা প্রচণ্ড গরম শুরু হয়। গরমে শ্বাসকষ্টে আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। রোগীদের সুবিধার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে জেনাটরের ব্যবস্থা ছিল। তবে সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক করার পর আবারো নষ্ট হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে আইপিএস (ইন্সট্যান্ট পাওয়ার সিস্টেম) এর মাধ্যমে কিছুটা সমস্যা নিরসন করা হয়েছে। তবে আরো দুটো আইপিএসের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া গেলে সমস্যা আর থাকবে না। তিনি বলেন, উচ্ছিষ্ট খাবার বা টয়লেট থেকে গন্ধ হতে পারে। তবে উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ছোট ছোট ডাস্টবিন রাখা হয়েছে।