ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সড়ক কেটে দোকানের নিচ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গলি নির্মাণ

সড়ক কেটে দোকানের নিচ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গলি নির্মাণ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক থেকে দেখলে মনে হবে একটি অটোরিকশা সড়কের পাশে স্বাভাবিকভাবেই দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এর আড়ালে কাটা হয়েছে সড়ক। এমনকি সড়ক কেটে সওজের জায়গায় নির্মাণ করা অবৈধ দোকানের তলদেশ দিয়ে গলি নির্মাণ করা হয়েছে। গলির অপর পাড়ে ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ করে তৈরি করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজ এবং ব্রিজ পেরিয়ে ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়েছে টিনের তৈরি আবাসিক ঘর। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সড়ক কেটে এমন অভিনব কর্মকাণ্ড দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকায়। মরিয়মনগর রশিদিয়াপাড়া এলাকার প্রবাসী জনৈক ইয়াকুব নামের এক ব্যক্তি এসব করেছেন বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকার দাওয়াত রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশে সড়কের দক্ষিণে একটি অটোরিকশা গ্যারেজের নিচ দিয়ে এই সরু গলিটি করা হয়েছে। কাপ্তাই সড়কের পাশ কেটে পাকা দেয়াল দিয়ে এ গলিটি করা হয়। গলির মুখে কাপ্তাই সড়কের একেবারে মুখ কেটে সুরঙ্গের মতো করা হয়েছে। এর ভেতরে উপরে দোকান, নিচে গলি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার এই গলিটি উপর থেকে ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে। সড়কের মুখ আড়াল করে বেশ কয়েক মাস ধরে রাতের আঁধারে এটি করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘রাতের আঁধারে অত্যন্ত সুকৌশলে এটি করা হয়েছে। দিনে গলির মুখে তক্তা ও প্লাস্টিক বস্তা বিছিয়ে দিয়ে উপরে রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। তাছাড়া সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পথেই সড়ক কেটে এমনটি করায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। গলিটির অপর প্রান্তে চকাটাখালী ছড়ার উপর পাকা স্থাপনা এবং নির্মাণ করা লোহার ব্রিজের কারণে ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।’

এদিকে ফসলি জায়গাটাও মোহাম্মদ হারুন নামে মরিয়মনগর সওদাগর পাড়া এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদ হারুন বলেন, প্রায় ২১ শতক নাল জমির উপর সেমিপাকাসহ টিনের ঘর করা হয়েছে। অথচ তার জমি রয়েছে মাত্র ১২ শতক। বাকিগুলো আমার মালিকানাধীন। এরমধ্যেও জায়গার অবস্থান নিয়েও ঝামেলা রয়েছে। যেটি জজ কোর্টে বিভাগ মামলা চলছে। এসব উপেক্ষা করে সে ঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। সে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে একতরপা রায় নিয়ে দখল প্রক্রিয়া চালিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, রাঙ্গুনিয়া থানা, এসপিসহ অনেক জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু আমি ন্যায়বিচার পাইনি। বিষয়টি নিয়ে আমি পুনরায় মামলা করেছি, এখন শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। সে যে জোরপূর্বক দখলে গেছে সেই বিষয়েও সম্প্রতি থানায় অভিযোগ করেছি।’

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে গলি নির্মাণকারী প্রবাসী জনৈক ইয়াকুব বলেন, আশপাশের অনেকেই সড়ক কেটে এমন গলি করেছেন, তাই তিনিও এমনটা করেছেন। কোনো অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এসব কিছুই নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি বলে জানান তিনি।

এই ব্যাপারে মরিয়মনগর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু বলেন, ইয়াকুব নামে রশিদিয়া পাড়া এলাকার এক প্রবাসী ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ঘর নির্মাণ করলেও পরিষদের কোনো অনুমতি তিনি নেননি। সড়ক কেটে ঝুঁকিপূর্ণ গলি ও ছড়ার উপর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়েও তিনি পরিষদকে অবহিত করেননি। তিনি এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এই ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওয়ার্ক সুপারভাইজার রাসেল দেওয়ান বলেন, সড়ক কেটে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। যেই দোকানটির নিচ দিয়ে এমনটা করা হয়েছে এটিসহ আশপাশের দোকানগুলোও আমাদের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী বলেন, বিষয়টি গোপনে করায় আমাদের নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত