ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

থানার চিত্র বদলে দিলেন ওসি

থানার চিত্র বদলে দিলেন ওসি

একজন পুলিশ কর্মকর্তার চাইলে একটি থানার পরিবেশ বদলে দিতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুমিল্লার তিতাস থানার ওসি সুধীন চন্দ্র দাস। দায়িত্ববোধ আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তিনি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন থানার সার্বিক পরিবেশের চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে সুধীন চন্দ্র দাস তিতাস থানায় যোগদান করেন। যোগদানের মাত্র ৯ দিন পর একই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পান। যোগদানের পরপরই জিপি নামক নীরব চাঁদাবাজি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সরবরাহে লেনদেন বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন, যেন থানায় আগত সেবাপ্রত্যাশী কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন। অবকাঠামো উন্নয়নে ভঙ্গুর থানার আঙিনা ছিল আবর্জনা আর অসমতল। থানার মূল ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত তিনি রাস্তাটি সিসি ঢালাই করেন। থানা ভবনের চারদিকে আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করে সেখানে রোপণ ও বোপন করেন বিভিন্ন জাতের ফল-ফলাদি ও শাকসবজি। একটু বাতাসে যেখানে জানালা খেয়য়ালা ছিল দুষ্কর; সেই বালুর অত্যাচার থেকে বাঁচতে তিনি থানা আঙিনাকে রূপ দেন সবুজ গালিচায়। একে একে নির্মাণ করেন মিডিয়া সেল ও স্যালুটিং ডায়েস।

সেবাপ্রত্যাশীর একসময় চায়ের দোকানে বসে সময় কাটাতে হতো। সেখানে তিনি নির্মাণ করেছেন গোলঘর ‘কিছুক্ষণ’। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি থানা ভবন হইতে থানা মসজিদ পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

তিতাস থানা এলাকায় প্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, খুন ও আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তির লাশ থানা কম্পাউন্ডে খোলা আকাশের নিচে রাখা হতো। বিষয়টি যেমন অমানবিক, তেমনি হৃদয়বিদারক। এই সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে যোগদানের প্রথম সপ্তাহে তৈরি করেন লাশঘর।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হয়। উপজেলা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা মর্গে সেই লাশ পাঠাতে হয়। আর লাশ পরিবহনে ব্যবহার করা হয় সিএনজি বা অটোরিকশা, যার একদিক দিয়ে লাশের মাথা আর অন্যদিক দিয়ে পা বাহির হয়ে থাকত। অনেক সময় লাশ বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা রোদে শুকিয়ে যেত। সেখানে তিনি নিজ উদ্যোগে লাশবহনে নতুন পিকআপ ভ্যান ক্রয় করেন। পিকআপ ভ্যানটি অন্তিম পারাপার হিসেবে রুপক অর্থে নাম রাখেন ‘পারাপার’। এই পারাপার দিয়ে শুধু লাশ বহন করা হয় এমন নয়, এই পিকআপ গাড়িটি পেট্রোল ডিউটিতে ব্যবহৃত হয়। ইহাতে যেমন লাশের সম্মানের সাথে বহন করা হয় তেমনি এই গাড়ির কল্যাণে থানা এলাকার মানুষকে পাহারা দিয়ে এলাকার চুরি, ডাকাতি মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

বিশেষ করে তার দক্ষতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিতাস থানা এলাকায় পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে। তিতাস উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট অফিসাররা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশি সেবা প্রদান করায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের মামলা-মোকদ্দমা হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ মামলা মোকদ্দমার জালে আটকা পড়ে আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হইতে রক্ষা পাচ্ছেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিতাস থানায় মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। সুধীন চন্দ্র দাসকে প্রায় রাতেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডিউটিরত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।

অনেক ওসি এ থানায় এসেছে, চলেও গেছেন। আপনি কেন আপনার দাপ্তারিক দায়িত্বের বাইরে থানা পরিবেশকে একটি বাসযোগ্য স্থানে পরিণত করতে গেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্ববোধ ও ইচ্ছাশক্তি থেকে করেছি। আমি একদিন এখান থেকে বদলি হয়ে যাব, তবে তিতাসের মানুষ এর সুফল পাবেন। আমার বন্ধুমহল ও এলাকার কিছু ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমি এমন কাজ করতে পেরে আনন্দিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত