ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভুলতা-কুড়িল বিশ্বরোড ও ভুলতা-গাজীপুর বোর্ডবাজার সড়ক

বিআরটিসি ছাড়া অন্য বাস চলে না

বিআরটিসি ছাড়া অন্য বাস চলে না

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ রাজধানীতে আসা-যাওয়া করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী আড়াইহাজার উপজেলা, নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের যাতায়াত এ পথে। এখান থেকে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম প্রধান সড়ক ঢাকা বাইপাস সড়ক ও কাঞ্চন কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক। ব্যস্ততম এই সড়কে একমাত্র গণ পরিবহন বিআরটিসি বাস সার্ভিস। কিন্তু সেই বাসে সরকারী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশী রাখা হয় বাস ভাড়া। এমনকি সময় মতো বাস না পাওয়া বেশিরভাগ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এই সড়কে যাতায়াতরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও রাজধানীতে কর্মরত লোকজনদের। এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে বিআরটিসির পাশাপাশি অন্য গণপরিবহনের দাবি করে আসছেন যাত্রীসাধারণ। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের কারণে চলতে বাধা অন্য গণপরিবহন।

সরেজমিন ঘুরে জানাযায়, রূপগঞ্জের ভুলতা থেকে রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোডের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার, আর ভুলতা থেকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এই ৫৩ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক লোকজন যাতায়াত করেন।

২০১৭ সালে এ সড়কে চলাচলের জন্য গণপরিবহনের দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত চলাচল শুরু হয় বিআরটিসি বাস সার্ভিস। প্রথম দিকে বাসভাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হলেও পর্যাক্রমে কয়েক দফা বাড়ে ভাড়া। ভাড়া বেশি নেয়ার প্রতিবাদ করলে অনেক যাত্রী বাসের হেলপার, তাদের নিয়োজিত বাহিনীর দ্বারা হতে হচ্ছে লাঞ্চিত।

যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার নির্ধারিত প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা। কিন্তু এ সড়কে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। তারা তাদের ইচ্ছে মতো রাখছে ভাড়া। ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। সরকারি হিসাব অনুযারী ভাড়া রাখার কথা ৪৫ টাকা ১৫ পয়সা থাকলেও রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা। কাঞ্চন চান টেক্সটাইল থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার, ভাড়া রাখা হয় ৫০ টাকা। সড়কে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ এ বাসে চলাচল করে। সময় মতো বিআরটিসি বাস সড়কে না পাওয়ায় অনেক সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও রাজধানীর বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ব্যক্তিদের। এ সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের পাশাপাশি অন্য কোনো গণপরিবহন চলাচল করলে ভোগান্তি থেকে অনেকটা রেহাই পেত বলে দাবি যাত্রী সাধারণের।

অন্যদিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের বাইপাস সড়কের ভুলতা থেকে গাজীপুার বোর্ড বাজার পর্যন্ত সড়কের দুরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এ সড়কেও একেবারেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ফিটনেসবিহীন প্রাইভেট কার ছাড়া নেই বড় কোনো গণ পরিবহন। সেজন্য এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে যাত্রীদের গুনতে হয় অধিক ভাড়া।

তবে স্থানীয়রা জানান, বহুবার বিভিন্ন গণপরিবহন এ সড়কে চলাচলের চেষ্টা করলে বিআরটিসি বাস নিয়ন্ত্রণকারী একটি সিন্ডিকেট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্বীকার হতে হয়েছে অনেক হামলা ও মারধরের।

পরিবহন ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, এই সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস যাত্রীদের সঠিক সেবা প্রদান করতে পারছে না। সেজন্য আমরা আমাদের গাড়িগুলো যাত্রীদের সুবিধার্থে এ সড়কে চলাচলের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি। যখনই অন্য গণপরিবহন চলতে যায়, তখনই বিআরটিসির নিয়োজিত লোকজন ঝামেলা করে।

এ ব্যাপারে সলিমউদ্দিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর মালুম জানান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গণ-পরিবহনের দাবিতে আন্দোলন করায় এখানে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হয়েছিল। কিন্তু সেই আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত ভাড়া, বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষাসহ নানান হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। এজন্য তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ও কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কটি ব্যস্ততম সড়ক। বর্তমানে একটি মাত্র গণপরিহন এখান দিয়ে চলাচল করছে। এ পরিবহনে ভাড়া নিচ্ছে অনেক বেশি। তবে এ পরিবহনের পাশাপাশি অন্যন্য গণপরিবহন যদি এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে, তবে এলাকার মানুষ বেশ উপকৃত হতো।

এ ব্যাপারে বিআরটিসির রোড ঠিকাদার জিল্লুর রহমান বলেন, সড়কে ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে। সড়কের গণ-পরিবহন চলাচল করতে বিআরটিএ’র অনুমতি লাগে। এ সড়কে বিআরটিসি বাস ছাড়া কোনো গণ-পরিবহন চলার অনুমতি নেই। আমার কোনো লোকজন সড়কে অন্য যানবাহন চলতে কোনো বাধা দেয় না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত