আলতাদিঘি শালবন হুমকির মুখে

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁর ধামইরহাটে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী শালবন। বনের মাঝে রয়েছে আলতাদিঘি। এ বনের প্রধান বৃক্ষ শাল গাছ। বিভিন্ন লতা গাছগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দিন দিন কমছে শালগাছ। এতে বন তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। শালগাছসহ অন্যান্য গাছকে রক্ষা করতে সদিচ্ছাসহ কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ভারতীয় সীমান্তের কোলঘেঁষে ধামইরহাট উপজেলা। আর জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তরে অবিস্থত ‘আলতাদিঘি শালবন’। শালবনের আয়তন প্রায় ২৬৪ দশমিক ১২ হেক্টর। এর মাঝখানে রয়েছে ৪৩ একর আয়তনের আলতাদিঘি। ২০১১ সালে আলতাদিঘি শালবনকে জাতীয় উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা শালবনে রয়েছে- শাল, আকাশমনি, কেওড়া, হরতকি ও ঔষধিসহ বিভিন্ন গাছ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন লতাপাতা। এ বনে রয়েছে শিয়াল, বেজি, সজার, অজগর, হনুমান, বানর, গন্ধগোকুল, বনবিড়ালসহ প্রায় ২০ প্রজাতির পাখি।

এ বনের ঐতিহ্য শালগাছ। শালগাছসহ অন্যান্য গাছকে সাপের মতো জড়িয়ে (পেঁচিয়ে) রয়েছে হিংলো লতা, গুরুঞ্চলতা, ঝারিলতা ও বনবরইসহ বিভিন্ন লতা। এসব লতা বড় বড় শালগাছে শক্তভাবে জড়িয়ে থাকায় গাছ মোটা হতে পারছে না। এসব পরগাছা গাছ থেকে তাদের খাবার গ্রহণ করে। গাছে লতা জড়িয়ে থাকার কারণে এক সময় গাছটি মারা যায়। গাছে লতাগুলো জড়িয়ে থাকায় দেখতে জীবিত মনে হলেও আসলে মৃত। এসব মরা গাছগুলো একসময় হারিয়ে যায়। রাতের আঁধারে কেউ কেটে নিয়ে যায়। কাটা গাছের গোড়াগুলো পড়ে রয়েছে। এতে বন বিভাগের অনেকটা উদাসিনতা রয়েছে।

আলতাদিঘি গ্রামের মিন্টু রহমান বলেন, শালবনের ঐতিহ্য শালগাছ। দিন দিন শাল গাছ কমে যাচ্ছে। এসব গাছে বিভিন্ন লতা হয়েছে। লতাগুলো গাছে জড়িয়ে থাকায় গাছ মোটা হতে পারে না। আবার অনেক গাছ বাড়তে পারেনা। একসময় গাছ মরে যায়। এ গাছ রক্ষা করতে লতাগুলো কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া বনে বেতগাছ রয়েছে। মাটিতে কাঠ জাতীয় যেসব বীজ পড়ে থাকে বেতের গাছের কারণে নতুন করে চারা গজাতে পারে না। বেতের কারণে অনেকটা জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে। গাছ বাঁচাতে হলে বন বিভাগ থেকে গাছের পরিচর্চা বা যত্নবান হতে হবে। ধামইরহাট বনবিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, কিছু লতাপাতার কারণে শালগাছের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ ছাড়া এসব লতা কাটা সম্ভব নয়। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় কিছু লতা কেটে দেয়া হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। লতাগুলো কাটা হলে শালগাছের জন্য অনেক ভালো হয়। তিনি বলেন- বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বেত গাছ রোপণ করা হয়েছিল। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সরকারিভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। শালগাছ কেউ অবৈধভাবে কাটতে পারে না। পুরোনো গাছ নষ্ট হয়নি। তবে যেসব গাছ মরে গেছে সে গাছগুলো সেখানোই রয়েছে।