ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৫ লাখ টাকার ভবন ৮৬ হাজারে বিক্রি!

৫ লাখ টাকার ভবন ৮৬ হাজারে বিক্রি!

বগুড়ার শেরপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি ভবন নামমাত্র মূল্যে নিলাম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যথাযথ প্রচার-প্রচারণা না চালিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনেকটা গোপনেই এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি ভবনটি মাত্র ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সংঘবদ্ধ ওই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের পকেটে উঠেছে লাখ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ভবনটির মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে এটি অপসারণ করার জন্য নিলাম দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। আর এই নিলাম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন ও তার দপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু যথাযথ প্রচার-প্রচারণা না চালিয়ে সরকারি ওই ভবনটি নিলাম দেন তিনি। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়মই মানা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, বহুল প্রচার ও প্রসারের জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় দেয়া হয়নি। উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টানানো হয়নি কোনো নোটিশ। এছাড়া মাইকযোগেও কোনো প্রচার চালানো হয়নি। প্রকৌশলীর নিজের পছন্দের লোকজন ছাড়া নিলামের বিষয়টি তেমন কেউই জানেন না। তাই নিলাম ডাকে সর্বনিম্ন মূল্য ধরেন মাত্র ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া কাগজ-কলমে ২০০ টাকা মূল্যের দরপত্র ৬৪টি বিক্রি দেখানো হলেও কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক দরপত্র জমা পড়েনি। মাত্র চারটি দরপত্র জমা দেখিয়ে বিগত ৭ জুন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে অনেকটা গোপনেই নামমাত্র মূল্যে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বগুড়ার মের্সাস বুলবুল ট্রেডার্সের নিকট সরকারি ভবনটি বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে সেটি আবার চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

পুরোনো স্থাপনা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী বলেন, সরকারি ভবন নিলামের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। তাই দরপত্র জমা দেয়ার সুযোগ পাইনি। এছাড়া নিলামের বিষয়টি পত্রিকায় বা মাইকে প্রচার-প্রচারণা দেখতে বা শুনতে পারেননি। জানলে অবশ্যই দরপত্র কিনে জমা দিতাম এবং ডাকে অংশগ্রহণ করতাম। আর আমরা অংশ নিলে অবশ্যই সরকারি ওই ভবনটি বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হতো। সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পেতেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রকাশ্যে ডাক হলে ওই ভবনটি চার থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রিপা পারভিন বলেন, নিলামের বিষয়টি কীভাবে করা হয়েছে, সেটি উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘটনাটি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা। উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, নিলাম বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দেয়ার নিয়ম নেই। তাই এটি করা হয়নি। মাইকযোগে প্রচার-প্রচারণা না হলেও নোটিশ জারির মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়েছে। দরপত্রের যথাযথ নিয়ম মানা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি একাইতো আর নিলাম দেয়নি। ইউএনও স্যার ও জনস্বাস্থ্যের সহকারী প্রকৌশলীও ছিলেন। কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ দরদাতার নিকট ভবনটি বিক্রি করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, সরকারি ওই ভবনটি নিলামের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী। তাই প্রচার-প্রচারণা চালানো তারই দায়িত্ব। সেটি যথাযথভাবেই করা হয়েছে বলেই জানি। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই আমার নিকট অভিযোগ আসত। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত