ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উপলক্ষ্য ঈদুল আজহা

কামার সম্প্রদায়ের বেড়েছে ব্যস্ততা

কামার সম্প্রদায়ের বেড়েছে ব্যস্ততা

ঈদুল আজহা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আগত ঈদুল আজহার আনন্দ যেন সবার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। এই ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু জবাইয়ের অন্যতম উপকরণ চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পেশাদার কামার সম্প্রদায়। তারা যেন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, ধানকাটার মৌসুম কাঁচি এবং কোরবানি ঈদে চাকু, ছুরি, চাপাতি, বটির বেশি দরকার পড়ে। তখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সব এলাকার কামার সম্প্রদায়। কামার পাড়ার দিন-রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে আশপাশের এলাকা। এবছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি দেখতে সুন্দর ও অধিক ধারালো হয়, এমনকি দাম ও সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তাই কামারদের তৈরির জিনিসের চেয়ে মেশিনের তৈরি চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ক্রমেই বাড়ছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনও এ পেশায় জড়িয়ে আছেন বলে অনেক কামাররা জানান। তারা বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় এই পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই আমাদের অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

কামাররা জানান, এক সময় তাদের বেশ কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরির জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকে না। তবে ধানকাটার মৌসুম ও কোরবানি উপলক্ষ্যে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় তাদের দৈনিক ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে তাদের হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

নকলা শহরের ছাত্রী ছাউনির পেছনের লোহার তৈজসপত্র তৈরির কারিগর (কামার) মস্তুফা মিয়া বলেন, আমি অন্যকোনো কাজ তেমন পারি না, তাই বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী কর্মকে এখনও ধরে রেখেছি। এ আয় দিয়েই সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আগে নকলা শহরের প্রাণকেন্দ্রের কাচারি মসজিদ মোড় হতে পূর্বদিকে যাওয়ার রাস্তায় বেশ কিছু কামারের দোকান ছিল। আর তাদের অবস্থানগত পরিচিতির জন্যই নকলা শহরের জনবহুল ও গুরুত্বপূূর্ণ ওই এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল কামারপট্টি (নতুন নাম গ্রিন রোড)। অন্য এক কামার নজরুল ইসলাম বলেন কয়েক বছর আগেও নকলা বাজারে অর্ধশত কামারের দোকান ছিল। কিন্তু মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির দাপটে তা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে নকলা বাজারে ৮-১০টি কামারের দোকান রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নারায়নখোলা, চন্দ্রকোণা, বারমাইশা, উরফা, গনপদ্দী, কৃষ্ণপুর, ছাল্লাতুলা, শিববাড়ি, পাঠাকাটা, খারজান, বিহারিরপাড়, চিথলিয়া, বাউসা বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজার কিছু কিছু কামারের দোকান আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার এসব কামাররা লোহা কিনে সেগুলোকে আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তৈরিকৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা তাদের চাহিদা মোতাবেক কামারের দোকান থেকে জিনিস কিনছেন। কামাররা এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মৌসুমি চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারিও বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও বেড়েছে। দা ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, ছুরি ছোট ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ১,০০০ টাকা থেকে একহাজার ৫০০ টাকা করে বেচা-কেনা হচ্ছে। কামাররা বলছেন, লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রপাতির দাম একটু বেড়েছে।

অনেকে জানান, মেশিনে তৈরি আধুনিক যন্ত্রের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজহার মৌসুমে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলোর মুখ দেখে। তবে কামার শিল্পীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখনকার প্রজন্ম কামার কে? তাদের কাজ কি? তারা কি ধরনের জিনিস বানায় বা বানাত? এবিষয়ে চিনতে-জানতে পারবে না। অন্তত বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই কামার শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সুশীলজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত