ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রস্তুত খামারিরা

কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রস্তুত খামারিরা

নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষ্যে খামারিরা সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনার আশা করছেন। এছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ১৩ এবং নরসিংদীতে ৮৮ হাজার পশু। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নওগাঁ : নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রাকৃতিকভাবে খামারিরা প্রস্তুত করেছেন গবাদিপশু। শেষ সময়ে পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এ বছর গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় লালনপালনে বাড়তি টাকা খরচ হয়েছে। আর বাড়তি দামে বিক্রি হবে বলে আশাবাদী খামারিরা। তবে জেলায় চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পশু লালনপালন করা হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাবে বিভিন্ন জেলায়। এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার গবাদিপশু বেচাকেনার আশা। খামারি আব্দুল মজিদ বলেন, গবাদিপশু পালন ও মৎস্য চাষের উপর যুব উন্নয়ন থেকে ১৯৯৬ সালে ১৫ দিন এবং ১৯৯৮ সালে ১ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কোরবানির জন্য এ বছর ১৪৪টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি গরু ৮০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে। এরই মধ্যে খামার থেকে প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগ মুহূর্তে সব গরু বিক্রি হওয়ার আসা। এবার খরচ বাদে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লাভের আশা এ খামারির। এছাড়া দুগ্ধজাত ৩৬টি গরু থেকে প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। অনেকে গরু কিনার পর খামারেই রেখে দিয়েছেন। ঈদের আগে খামার থেকে নিয়ে যাবেন ক্রেতারা।

খামারের শ্রমিক মুক্তার হোসেন ও আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ বছর থেকে খামারে কাজ করছি। প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস ও দানাদার খাবার দিয়ে লালন-পালন করা হচ্ছে। প্রতিদিন গরুকে গোসল, খাবার ও পরিচর্চা করা হয়। দিনে ৩ বার গোসল করা হয়। মাসে ১২ হজার টাকা বেতন পাওয়া যায়।

ধামইরহাট উপজেলা সদরের টিএনটি মোড়ের খামারি আহসান হাবিব আদর বলেন, খামারে ১৫টি গরু আছে। এরমধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ বছর দানাদার খাবারের দাম বেশি হওয়ায় পশু লালনপালন করতে খরচ পড়েছে বেশি। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় পশু লালনপালন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গত বছরের তুলনায় দানাদার খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন দাম ভালো পেলে লাভবান হওয়া সম্ভব। ছোট উদ্যোক্তা বা খামারিদের পক্ষে গরু লালনপালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগামীতে বড় খামারিরা থাকবে আর ছোটরা ঝরে পড়বে।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দীন বলেন, জেলায় ৩৩ হাজার খামারে প্রায় ৭ লাখ বিভিন্ন জাতের পশু লালনপালন করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জেলায় প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার পশু জবাই হবে। অতিরিক্ত পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়। খামারিরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশুগুলো লালনপালন করেছেন। এখনো বেচাকেনা তেমন জমে উঠেনি। তবে কয়েকদিন পর থেকে বাজার জমতে শুরু করবে এবং জেলার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা কিনতে আসবেন।

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) : এ বছর ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া মিলিয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১২ হাজার ৭৫৪টি পশু। এসব পশুর আনুমানিক বাজার মূল্যে ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার উপরে। গফরগাঁও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলায় এবার কোরবানির জন্য ৬ হাজার ৫৫১টি ষাড়, ছাগল ৫ হাজার ২৫৩, গাভী ৭৯০, বলদ ৭০, মহিষ ৩৪ ও ৫৬টি ভেড়াসহ ১২ হাজার ৭৫৪টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল টিমসহ ৯টি হাট-বাজার প্রস্তুত রয়েছে।

রায়পুরা (নরসিংদী) : ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীতে কোরবানির জন্য প্রায় ৮৮ হাজারেরও বেশি পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। এ মুহূর্তে কোরবানির পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। কোনো ধরনের ওষুধ প্রয়োগ না করে প্রতি বছরের মতো এবারো খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। তবে গোখাদ্যের চড়া দামের কারণে পশু লালনপালন করে ন্যায্য দাম পাবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৫ হাজার। এর বিপরীতে ছোট বড় মিলিয়ে ৭ হাজার ৮৮৩ জন খামারি ৮৭ হাজার ৮৮৮টি পশু পরিচর্যার করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে ষাড় ২৯ হাজার ৪১৪টি, বলদ ৬ হাজার ৫০২টি, গাভী ৫ হাজার ২২৬টি, মহিষ ১ হাজার ৮৭৫টি, ছাগল ৩৩ হাজার ৪০৫টি, ভেড়া ১১ হাজার ৪০৬টি ও অন্যান্য ৫৫টি।

রায়পুরা উপজেলা চরমধুয়া এলাকার গ্রিন এগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশি জাতের ১০০টি গরু ও মহিষ পালন করা হয়েছে। ৯০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে এই খামারে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে শষ্কায় আছি। তবে যদি বাইরে থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকে তবে আমরা লাভবান হতে পারব বেশি।

নরসিংদী জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারগিস খানম বলেন, নরসিংদী জেলায় ৭৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে ৭ হাজার ৮৮৮টি খামারে ৮৭ হাজার ৮৮৮টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্ষতিকারক কোনো রাসায়নিক পদার্থ যাতে ব্যবহার না করে, সে জন্য খামারিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে করে খামারিরা অনেক সচেতন হয়েছে। এ বছর আমাদের বাইরে থেকে পশু আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। তাই আশা করছি খামারিরা লাভবান হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত