চাহিদার চেয়ে ৪১ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪১ হাজারের বেশি কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ করে বাজার ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঈশ্বরদীর খামারিরা। খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে এবার খরচও হচ্ছে বেশি। খামারিরা জানান, এ বছর পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন গরুপ্রতি খরচ হয় ১৫০০-১৬০০ টাকা। জিনারুল ইসলামের মতো উপজেলায় কোরবানির পশু পালনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনাবেচা। তাই বাজার ধরতে গরুর যত্নে ব্যস্ত তারা। প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক খাবার ব্যবহার করে পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা।

এরইমধ্যে এ পশু বিক্রির শুরু হচ্ছে সংশ্লিষ্ট হাট-বাজারে। তবে দাম চড়ায় এখন তেমন কেনাবেচা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭২ হাজার ২০৩টি কোরবানির পশু। এরমধ্যে ষাঁড় গরু ১৮ হাজার ৫০৬, বলদ গরু ৪ হাজার ৮৩৭, গাভী ১ হাজার ৮৭১, মহিষ ৯৬৯, ছাগল ৩৮ হাজার ৫০০ ও ভেড়া ৭ হাজার ৫২০ রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব পশুকে ঘাস, খড়, বিভিন্ন প্রকারের ভুসি, ডালের গুঁড়া, খৈলসহ দেশীয় পদ্ধতিতে ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় ৬ মাস থেকে ১ বছর ধরে। তবে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ঈশ্বরদীর অরোনকোলা পশুরহাটের চারপাশে খামারের সংখ্যা বেশি। এসব খামারে কোরবানির গরু পরিচর্যা ও মোটাতাজা করছে কৃষকরা। উপজেলার গ্রামঞ্চলে ছোটখাটো খামারে পরিচর্যা ও মোটাতাজা করছে নারী-পুরুষ। খামারে রক্ষিত ষাঁড় গরুগুলোকে পরিমিত খাবার, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি পরিচর্যার মাধ্যমে গরু স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে। এছাড়া অধিক লাভের আশায় পশু লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা। উপজেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে এখানকার উদ্বৃত্ত গবাদি পশু। বাড়তি লাভের আশায় খামারিদের পাশাপাশি বাড়িতে পশু পালন করছেন কৃষকরা।

এ অঞ্চলে গো-খাদ্যের চড়া দামে ছোটখাটো খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য তারা ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানান। লাভে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে।

খামারি ও কৃষকরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়িতে আবার কেউ খামারে এসব পশু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে বড় করা হচ্ছে এসব পশু। খড়ের পাশাপাশি খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টার গুঁড়া, ধানের কুঁড়া, খড় ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৩৫টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন পৌরসভার অরনখোলা গরু হাটের পাশে মুনতাহার ডেইরি ফামের খামারি মো. বাচ্চু প্রমানিক। তার খামারে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা দামের পশু আছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধির আশা করছেন এই খামারি।

একই এলাকার মেসার্স মিথিলা কৃষি খামারের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গরুকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর চাহিদা থাকে বেশি। দামও পাওয়া যায় ভালো।’

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসাইন জানান, কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে পুরো উপজেলায় আমাদের দুইটা ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। যে কোনো পশু অসুস্থ হয়ে গেলে জরুরি সেবা দিতে আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে। অরোনকোলা পশুর হাটে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দিতে মেডিকেল টিম তৈরি রয়েছে। সন্দেহজনক গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।