ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাটোরে ৫ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত

নাটোরে ৫ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও খামারিরা। গতকাল বুধবার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম: এ বছর জেলায় কোরবানি উপযোগী পশুর সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ১৬৭টি আর চাহিদা ২ লাখ ৮৫৩টি। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত কোরবানির পশুর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৩১৪টি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইউনুছ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কোরবানির পশুর কোনো অভাব নেই। বরং জেলা থেকে অন্য জেলায় উদ্বৃত্ত কোরবানির পশু পাঠানো সম্ভব হবে। দাম গত বছরের থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে। কুড়িগ্রামে কোরবানির ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে গরু-ছাগল বেচাকেনা। হাটে উঠতে শুরু করেছে বাহারী রং ও নামের হৃষ্টপৃষ্ট বহু জাতের গরু-ছাগল। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাধ্যানুযায়ী কোরবানির জন্য গরু-ছাগল কিনছেন ক্রেতারা। এদিকে গরুকে কোরবানিযোগ্য করতে পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারিরা। জেলায় ৯টি উপজেলার তিনটি পৌরসভাসহ ৭৩টি ইউনিয়নের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে ২-৪টি করে ষাঁড়, বলদ কিংবা গাভি ও ছাগল পালন করে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া বড় ছোট খামারি তো আছেই। এসব গরু-ছাগল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার পশুর হাটে বিক্রি করা হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট খামারির সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৬৪টি। এসব খামারে ষাঁড় আছে ৭৪ হাজার ৪৪৬টি, বলদ আছে ৫ হাজার ৪৯৩টি, গাভী আছে ৩০ হাজার ৩০৭টি এবং মহিষের সংখ্যা ৯১৩টি। যার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৯টি। এছাড়া ছাগল রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩২টি এবং ভেড়া ২৩ হাজার ৯৭৬টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৬৭টি। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে ৬৯ হাজার ৩১৪টি। নাগেশ্বরী উপজেলার আরশী এগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা হারিসুল বারী রনি জানান, তিনি একেবারেই অর্গানিক ও সাইলেস পদ্ধতিতে দেশীয় সুস্বাদু খাবার খাইয়ে গরুগুলোকে লালন-পালন করে কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। যাতে করে কোরবানির ঈদে মানুষ একদম সুষম ও ভেজালমুক্ত মাংস খেতে পারে। খামারের কর্মী আব্দুর রহমান জানান, তাদের খামারে শাকিব খান নামের একটি ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৭০০ কেজি। এর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এছাড়াও রয়েছে ডিপজল, ফাটাকেষ্ট, কালা মানিকসহ বাহারী নামের গরু।

বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ঠাকুরবাড়ি এলাকার আবুল হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছর ৪-৫টি করে গরু মোটাতাজা করে কোরবানিতে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়ে আসছেন। এ বছরও তিনি ২টি গরুকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় দামও এবার একটু বেশি হবে বলে জানান।

নাটোর: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোর জেলায় ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। শেষ সময়ে পশুর যত্ন ও খাদ্যভ্যাস দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এরইমধ্যে নাটোর জেলার ১৮ হাজার খামারি বিভিন্ন হাটে, অনলাইনে ও খামারগুলোতে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোর জেলায় ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্য ষাঁড় ৮৩ হাজার ৮২০টি, বলদ ১৩ হাজার ১৭২টি, গাভী ১৪ হাজার ২৪২টি, মহিষ ২ হাজার ৮২২টি, ভেড়া ৪৬ হাজার ১৬৯টি এবং ছাগল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সদর উপজেলায় ৮৫ হাজার ৩৮৩টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৫৬ হাজার ৯০৯টি, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫৫ হাজার ৮২৯টি, লালপুর উপজেলায় ৬৮ হাজার ১২৭টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৯০ হাজার ৭১৪টি, সিংড়া উপজেলায় ৯২ হাজার ৫৬৬টি এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৭০ হাজার ৭১০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।

এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি অনলাইন প্লাটফর্ম ‘নাটোর পশুর হাট’ ও ‘অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট’ থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এছাড়া জেলার ৭ উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস, ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারসহ বিভিন্ন অনলাইন ফেইসবুক প্লাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচা কাজ শুরু করেছেন।

জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসে সদরের তেবাড়িয়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ী এবং সিংড়া ফেরিঘাট।

লোচনগর এলাকার খামারি শরিফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে পাঁচটি গরু প্রস্তুত করেছেন। তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার, খৈল, গম, ভুসি, ছোলা এবং সবুজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই পশু মোটাতাজা করেছেন।

দিঘাপতিয়া এলাকার খামারি আবুল হোসেন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে ৩০টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। বর্তমানে গরুর বাজারমূল্য মোটামুটি ভালো। দুটি ষাঁড় বিক্রি করেছি। আশা করছি, সামনে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে খাদ্যের দাম বাড়ায় বর্তমানে খামার তৈরি করা তেমন লাভ নয়। খাদ্যের দাম কমলে আমরা খামারিরা কিছুটা লাভবান হতে পারব।

সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার খামারি আনিছুর রহমান বলেন, ৪ বছর ৫টি ষাঁড় দিয়ে খামার গড়েন তিনি। বর্তমানে খামারে মোট ২৫টি ষাঁড় গরু রয়েছে। যার মধ্য ২০টি ষাঁড় গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে ৫০-৬০ লাখ টাকা বিক্রি করবেন বলে জানান।

গরু কিনতে আসা নুর হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার

জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরুপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।

নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এ বছর ১৮ হাজার খামারে প্রায় ৫ লাখের অধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে পশু হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। এ বছর খামারিরা সঠিক মূল্য পাবে বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত