ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

১০ টাকা ভাগা সবজি বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের

১০ টাকা ভাগা সবজি বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের

অভাবের সংসারে যেন অভাব দিয়েই কেটে যায়। দিন যায় মাস যায় তবুও অভাবটা ফুরিয়ে যায় না। না ফুরানোর দায় নিয়েই চলছে জোসনা বেগমের সংসার। খুব সামান্যতেই খুশি জোসনা বেগম। মাত্র ৫০০ টাকার মূলধনে সারা দিনে ১০ টাকা করে কাঁচা সবজি বিক্রি করে ২০০ টাকা আয় করে চলে যায় তার সংসার। তার সব কাঁচা সবজিই ১০ টাকায় ভাগা করে বিক্রি। প্রচণ্ড অভাবের মধ্যেও নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। নানা অভাবের মধ্যেও বেঁচে আছে জোসনা বেগম।

জানা যায়, বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার আলেক উদ্দিন মণ্ডলের স্ত্রী জোসনা বেগম। তার শুরুর জীবনটাও ছিলো অভাবের। নুন জোটে তো ভাত জোটে না। আবার ভাত জোটে তো নুন জোটে না। তার একমাত্র ছেলে মো. পেস্তা। সে এক সময় অটো চালিয়ে তিন বেলা খাবার খেলেও এখন সেটা হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু পা নিয়ে ঘরে পড়ে আছে ছেলে পেস্তা। তাকেও টানতে হচ্ছে। উপায় না পেয়ে জোসনা বেগম বগুড়া শহরের রাজাবাজার এলাকার পাইকারি সবজির বাজার থেকে সবজি কিনে নেন। তারপর সেগুলো ওজন করে ভাগা করেন। প্রতিটি ভাগা বিক্রি করেন ১০ টাকা করে। আলুর ভাগা, পটলের ভাগা, কাঁচা মরিচের ভাগা, বেগুনের ভাগা, শাকের ভাগা, কচুশাকের ভাগা, করলা, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির ভাগা বিক্রি করেন ১০ টাকা। তার এই ভাগার বাজারে অসংখ্য ক্রেতা আছে। দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুকসহ অভাবী মানুষগুলোই তার বড় ক্রেতা। এই ক্রেতারা বাজার থেকে একবারে ৩ কেজির মিষ্টি কুমড়া কিনতে পারে না। এই ক্রেতারা বাজার থেকে হাফ বা এক কেজি করে কাঁচা সবজি কিনতে পারে না। কারণ যা আয় করে তা দিয়ে হাফ কেজি করে তিনটি সবজি কিনতে গেলেই তারা অন্য পণ্য আর কিনতে পারবে না। কিন্তু ১০ টাকা করে তিনটি বা চারটি সবজি কেনা সহজ। কোনোমতে এক বা দুবেলা কেটে গেলেই হয়। অভাবী মানুষের এই সংসার এভাবেই চলছে। আর জোসনার ৫০০ টাকার মূলধন ব্যবসাও সেভাবেই চলছে।

বগুড়া শহরের রাজাবাজার এলাকার বাজার করতে আসা লোকমান হোসেন জানান, জোসনা বেগম শহরের রেললাইনের একপাশে বসে ভাগা করে সবজি বিক্রি করেন। এই সবজি সে দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করে আসছেন। যারা বাজার থেকে ১০০ টাকার বাজার করতে পারে না। তারা জোসনার দোকান থেকে ৫০ টাকার ৫ ভাগা সবজি কিনে বাড়ি ফেরে। এখন বাজারে সব পণ্যের দাম বেশি। যখন দাম কম ছিলো তখন জোসনা বেগম কম দামেই বিক্রি করেছেন। একসময় ২ টাকা ভাগা ছিল।

জোসনার প্রতিবেশীরা জানান, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা রোদের মধ্যে পুড়ে সে সবজি ভাগার ব্যবসা করে। খুব কষ্ট করে তাদের সংসার চলে। অন্যের কাছ থেকে চেয়ে খাওয়ার চেয়ে নিজে কিছু করে খাওয়ার মর্যাদাই আলাদা। আবার অনেক ক্রেতা আছে যারা ব্যাগ ভরে বাজার করতে পারে না। দেখা গেলো ৩টা বা ৪টা সবজি কিনতে গেলে ১০০ টাকার বেশি খরচ হয়। সেখানে জোসনার ভাগা কিনলে ৫০ টাকার মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। বাকি টাকায় চাল কিনে দুবেলা সে পেট পুরে খেয়ে বেঁচে থাকছে।

জোসনা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন ভোরে উঠে পাইকারি সবজির বাজারে যান। সেখানে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে সেগুলো ওজন দিয়ে ভাগা করে নেন। তারপর সেই ভাগা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিক্রি করেন। সে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মূলধান খাটান। আর সারা দিনে বিক্রি করে তার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। সে আয় থেকে চাল আর সবজি কিনে বাড়ি ফিরে ছেলেকে নিয়ে দুবেলা খেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ১ টাকা ভাগা দিয়ে শুরু করেছিলাম সবজির ভাগার দোকান। এখন দিনে দিনে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন প্রতি ভাগা বিক্রি করতে হয় ১০ টাকা। আগের মতো লাভও কমে গেছে। তারপরও ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকতে সে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই ভাগা সবজির ক্রেতা আছে। যারা স্বল্প টাকায় দিন চালায় তারাই তার বড় ক্রেতা। বাজারে ১০০ গ্রাম আলু, বেগুন দেবে না। দিলেও তার খরচ বেশি হবে। কিন্তু তাকে তো কম খরচে সংসার চালাতে হবে। সে কারণে সে ১০ টাকার ভাগা সবজি কিনে থাকে। তিনি জানান, তারো ইচ্ছা করে ভালো কিছু খেতে ভালো কিছু পরতে। কিন্তু অভাবের সংসারে সেসব হয়ে ওঠে না। অভাব আছে তাই অভাবের মধ্যেই অভাব দিয়ে কাটিয়ে দেন দিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত