বিদেশি জাতের কমলা-মাল্টার চারা তৈরি করে স্বাবলম্বী আতাউর

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পদ্ধতি। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নতজাতের বিদেশি গাছের চারা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আতাউর রহমান খাঁন। কয়েক বছর আগেও যিনি ছিলেন বেকার। এখন ভিনদেশি উন্নতমানের চারা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন তিনি। আতাউর রহমান খানের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। তার ৫০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘অজি সাইট্রাস বিডি’ নামের নার্সারি। এই নার্সারিতে রুট-সায়ন করে তৈরি করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি কমলা-মাল্টার চারা। ইম্পেরিয়াল ম্যান্ডারিন অস্ট্রেলিয়ান কমলা, পাকিস্তানি ও দার্জিলিং কমলা, মাল্টা বারি ওয়ান গাছের চারা তৈরি করেছেন তিনি। এসব চারা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

এসব ফলের চারার পাশাপাশি তার নার্সারিতে লাগিয়েছেন ইগ অব সান (সূর্য ডিম) আলফ্রানসেস, চিয়াংমাই, ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, থ্রিটেস্ট, আমেরিকান কেন্ট, ন্যাম ডকমাই গ্রিন, ন্যাম ডকমাই ইয়েলোর মতো ৪০ প্রজাতির আমের গাছ। এসব গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে।

লাগিয়েছেন বিদেশি বিভিন্ন মশলাজাতীয় গাছ ও আঙ্গুর ফলের গাছ। মহামারি করোনাকালে প্লাস্টিক বোতলে পেঁয়াজ-রসুন চাষ করেও অবাক করেছিলেন তিনি।

চারা তৈরি করে নিজের ২৫ শতক চা-বাগানে মাল্টা চাষ করছেন। রুট স্টক ও সায়নের মাধ্যমে জাম্বুরা গাছকে কমলা গাছে পরিণত করেছেন তিনি। এসব গাছে ধরেছে প্রচুর মাল্টা। একেকটি গাছে একশোর মতো মাল্টা ধরেছে। এসব মাল্টা বিক্রি করে চা-বাগান থেকে বাড়তি আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন আতাউর রহমান।

এ মৌসুমে ১০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করে অবাক করেছেন লাল ঢ্যাঁড়স ফলিয়ে। মাল্টার আবাদ দেখতে গিয়ে নজরে পড়ে লাল ঢ্যাঁড়সের ক্ষেতও। ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, গাছগুলোতে লাল টুকটুকে ঢ্যাঁড়স। লাল ঢ্যাঁড়স বাজারে বিক্রি করে বেশ দামও পেয়েছেন তিনি। তার এ লাল ঢ্যাঁড়সের আবাদ দেখে উৎসাহিত হয়েছেন এলাকার অনেক কৃষক।

জানা যায়, কৃষক আতাউর রহমান খাঁন এইচএসসি পড়ার পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। কোনো কাজ না পেয়ে ঝুঁকে পড়েন কৃষি আবাদে। কীভাবে নিজস্ব চিন্তায় বিদেশি ফলের চারা তৈরি করা যায় তা নিয়েই ভাবত সারাক্ষণ। স্কৃলপড়ুয়া ছেলে ফয়সালকে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি কাজ। কয়েক বছরে কৃষিতে ঝুঁকে দেখছেন সাফল্যের মুখ। এসব গাছের চারা ফেইসবুকের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে বেশ অর্থ আয় করছেন।

ছেলে ফয়সাল জানায়, পড়ালেখার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করছি। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখছি। কীভাবে উন্নতমানের গাছ থেকে কলম করতে হয়, বিদেশি গাছ সংগ্রহ ও রোপণ পদ্ধতি বাবা শিক্ষকের মতো শেখাচ্ছেন।

কৃষক আতাউর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফলের গাছ সংগ্রহ করে কলম চারা তৈরি করছি। বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি চারা সংগ্রহ করে পরে সেটা রুট-সায়নের মাধ্যমে গ্রাফটিং করি। তা বিক্রি করে বেশ আয় হচ্ছে। এর পাশাপাশি চা-বাগান করেছি। তিন বছর হলো ২৫ শতক জমির উপর চা-বাগানে মাল্টা চাষ করেছি। অবশ্য প্রথমত বাগানে একশ’ জাম্বুরার চারা গাছ লাগাই। পরে সেটি রুট-সায়নের মাধ্যমে মাল্টা গ্রাফটিং করে সফল হয়েছি। এখন ফল ধরছে গাছগুলোতে। আশা করছি সামনে প্রতিটি গাছেই মাল্টা আসবে। তাতে চা-বাগানে বাড়তি আবাদ হিসেবে মাল্টা বিক্রি করে অর্থ আয় করতে পারব। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমার কাছ থেকে অনেকে চারা কিনে নিচ্ছেন। এখন সব কিছু মিলিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছি। আমার কাজে সহযোগিতা করছে আমার ছেলে স্কুলপড়ুয়া ফয়সাল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ব্যাপক আকারে চায়ের জমিতে মাল্টা হচ্ছে। বিশেষ করে বেলে-দোআশ মাটিতে নানা বিদেশি ফল ও ফুল চাষ হচ্ছে। তেঁতুলিয়ার চাষিদের মধ্যে তিরনইহাট এলাকার আতাউর রহমান অন্যতম। তিনি একজন নার্সারির মালিকও। সম্প্রতি তিনি চা-বাগানে মাল্টা চাষ সফলতার মুখ দেখছেন। পাশাপাশি নার্সারিতে বিভিন্ন বিদেশি ফলের গাছের চারা তৈরি করে তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। চা শিল্প অঞ্চলে মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মাল্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।