ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জমে উঠেছে কোরবানির পশুরহাট

জমে উঠেছে কোরবানির পশুরহাট

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুরহাটগুলো জমে উঠেছে। প্রতিটি হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাইবান্ধা : ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গাইবান্ধার সাঘাটায় কোরবানির পশুরহাটগুলো জমে উঠেছে। প্রতিটি হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হচ্ছে। বিক্রিও বেশ জমে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু দেখা না গেলেও বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই গরু কেনাবেচায় খুশি নন। ক্রেতাদের অভিযোগ- দাম বেশি আর বিক্রেতাদের অভিযোগ তেমন দাম মিলছে না। আশানুরূপ দাম না পেয়ে নাখোশ বড় আকারের গরুর মালিকরা। পশুর হাটে ইজারাদার ও পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তায় কাজ করছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে সাঘাটা উপজেলায় নিয়মিত এবং মৌসুমিসহ প্রায় ৬টি হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় গরু-ছাগল আমদানি ও বেচাকেনা হচ্ছে। বছরব্যাপী গরু পালনকারী খামারিরা এ সময় সব হাটে প্রচুর পরিমাণে কোরবানির গরু বিক্রি করে। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা কোরবানির জন্য শেষ মুহূর্তে পছন্দের গরু-ছাগল ক্রয় করতে হাট-বাজারগুলোতে ভিড় করছেন। ঈদের কয়েকটা দিন বাকি থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা হাট-বাজারে ভিড় করলেও গো-খাদ্যের দাম ও গাড়ি ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী গরুর দাম বেশি পড়ায় লোকসানের আশঙ্কা পাইকারদের।

প্রতিহাটে দালাল ও ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি গরু-ছাগল পাওয়া যায় না। তাদের কারণে গরু-ছাগলের দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারারা। তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ খড়, ভূসিসহ বিভিন্ন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা বছর একটি গরু পালন করতে যে ব্যয় হয় সে তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতা বা খামারিরা। যোগিপাড়া গ্রামের খামারি আনছার আলী জানান, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে বেড়ে গেছে। একারণে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে এবার খামারিদের লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলার ভরতখালী গ্রামের আতিয়ার রহমানের আলী বাবা নামে খ্যাত সবচেয়ে দর্শনীয় গরু দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে প্রতিদিন। গরুটির ওজন প্রায় ১৫০০ কেজি এবং দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ১৪ লাখ টাকা হলে সে আলী বাŸাকে বিক্রি করবে। এবার ভারত থেকে গরু না আসলেও দেশি গরুর সংখ্যা অনেক বেশি রয়েছে। কিন্তু পাইকারদের আনাগোনা কম বলে জানান ভরতখালী হাট কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্যরা। এদিকে দুর্বৃত্তরা জাল টাকা ছড়িয়ে দিয়ে যেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে, সেজন্য হাট কমিটির লোকজন ও পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান সাঘাটা থানার পুলিশ কর্মকর্তা।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা (কোরবানি ঈদ)। এ উপলক্ষ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রস্তুত রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পশু ও ১৩টি স্থায়ী-অস্থায়ী হাট। এরই মধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে পশুরহাট। তবে ভারতীয় পশু প্রবেশ না করায় কাঙ্ক্ষিত লাভের আশা করছেন কৃষকসহ খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও খামারি সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভায় এবার ঈদে ছোট-বড় খামারিসহ প্রায় ১২০০ কৃষকের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোরবানি পশুর প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৬ হাজার ৩৮৬টি, বলদ ২৪২টি, গাভী ১৪৯টি, মহিষ ১১২টি, ছাগল ৫২৭৩টি ও ভেড়া ২৪১টি। শুধু ঈদের আগে কোরবানি পশুর তালিকা করেই দপ্তরটির দায়িত্ব যেন শেষ। এক সময় পশুর খাবার সংগ্রহ হতো শুধু প্রাকৃতিক উপায়ে। এখন পশুর বাণিজ্যিক কারণে খাবার, ওষুধ ও চিকিৎসা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরটির তদারকির অভাবে সঠিক নিয়মে নয়, অসৎ উপায়ে খামারিরা ইচ্ছামতো পশু মোটাতাজা করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা সচেতন মহলের। এদিকে কোরবানি ঈদ ঘিরে প্রতি বছরই দৌড়ঝাঁপ করতে হয় পশুর হাট-বাজারে। এ লক্ষ্যে ঈদের ১০-১২ দিন আগেই সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুরহাট সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। কালিয়াকৈরে সফিপুর, সিনাবহ, জামালপুর চৌরাস্তা, গাছবাড়ী, বড়কাঞ্চানপুর, ফুলবাড়িয়া, বেনুপুর ও সিঙ্গাপুর বাজার ৮টি স্থায়ী পশুরহাট পুরোপুরি প্রস্তুত। স্থায়ী পশুরহাটের পাশাপাশি মৌচাক নুরবাগ, রতনপুর, সফিপুর আনসার একাডেমি ৩নং গেট, পূর্বচান্দরা, বোর্ডঘর ছোটকাঞ্চানপুর এলাকায় ৫টি অস্থায়ী পশুরহাটের প্রস্তুতিও শেষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব হাটে আসছে কোরবানির পশু। পশুরহাটে লোকের সমাগম হলেও এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি কেনাবেচাও। এখন খুচরা ক্রেতা নয়, বেপারী, কসাই ও সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে পশু।

বেপারীরা বলছেন, হাটগুলো প্রস্তুত থাকলেও এখনও জমেনি পশু কেনাবেচা। ক্রেতা সমাগম কম থাকায় শ্রম-মমতায় লালনপালন করা গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া এখনই হাটে তুলছেন না খামারিরা। তবে স্থায়ী পশুরহাটের বেচাকেনা চলছে কোরবানি পশু। বেপারীদের আশা, আজ শুক্রবার থেকে পুরোদমে জমে উঠবে পশুরহাট। তখন ক্রেতাদের চাহিদা মতো নামবে কোরবানির পশু। এবার মাঝারি দামের পশু টার্গেট করে লাভের আশা করছেন বেপারীরা। অপরদিকে খামারিরা বলছেন, কয়েকটি খামারে গরু মোটাতাজা হলেও সিংহভাগ কোরবানি পশু পালন করে কৃষক। অনেক অসহায় নিরীহ কৃষক তাদের পালিত পশু বিক্রি করে সংসারের অভাব গোছাতে চান। তবে এখনও ভারতীয় পশু প্রবেশ না করায় তাদের কাঙ্ক্ষিত লাভের আশা করছেন কৃষকসহ খামারিরা। তবে পশুর নিরাপত্তায় পশুরহাটে তাদের মেডিকেল টিম থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরটি কর্মকর্তারা। এছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তাসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, আমাদের টিমের তদারকিতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পশু প্রস্তুত হয়েছে। তবে পশুর নিরাপত্তায় প্রতিটা পশুরহাটে আমাদের মেডিকেল টিম থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত