ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফসলি জমি কেটে মাটি উত্তোলন

ফসলি জমি কেটে মাটি উত্তোলন

বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমি ধ্বংস করে অবাধে মাটি-বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সব মহলকে ম্যানেজ করে অনেকটা দাপটের সঙ্গেই মাটি-বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালী বালুখেকোরা। স্থানীয় প্রশাসন বারবার অভিযান চালিয়েও তাদের থামাতে পারছেন না। বরং বালুদস্যুরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই দিনে-রাতে সমানতালে ড্রেজার ও খননযন্ত্রের মাধ্যমে ফসলি জমির বুক চিরে অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে চলেছেন। এতে করে শত শত বিঘা কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে কমতে শুরু করেছে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলার আবাদি জমির পরিমাণ। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে।

এদিকে কৃষিজমি সর্বনাশ করে অবাধে কাটা মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। আর বালু ব্যবহার করা হচ্ছে নিচু জায়গা ভরাটসহ নানা কাজে। এছাড়া অতিরিক্ত মাটি-বালু পরিবহন আর ওভারলোড ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। পাশাপাশি ধুলা-বালিতে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের শুভগাছা ও ভাতারিয়া গ্রাম। এই দুই গ্রামের ফসলি মাঠে বেশ কিছুদিন ধরে ফসলি জমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী বলে পরিচিত লাভলু মিয়া প্রথমে বিশাল ফসলি মাঠের মাঝখানে কমদামে জমি কিনেন। এরপর সেই ফসলি জমি থেকে শুরু করেন মাটি বিক্রি। সেইসঙ্গে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতের আঁধারে তুলছেন বালু। ফলে তৈরি হয় বিশাল আকারের গর্ত। স্বাভাবিক কারণেই আশপাশের জমি ভাঙতে শুরু করে। এরপর ভয় দেখিয়ে ওইসব ফসলি জমি কিনে রীতিমতো মাটি-বালু উত্তোলন হচ্ছে। এভাবে মাটি-বালুর লোভে কৃষি জমির সর্বনাশ করে যাচ্ছেন চক্রটি।

ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, আমার পাশের ছয় বিঘা জমি কিনে মাটি-বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী বালুদস্যুরা। এ কারণে সেখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আমার দুই বিঘা ফসলি জমিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া সড়কের পাশের জমিগুলোতেও ট্রাক থেকে মাটি-বালু পড়ে সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু বলার কিছুই নেই। নিষেধ করলে জমি বিক্রি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্যও এলাকার চিহিৃত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। তাই ভিটেমাটি নিঃশেষ হয়ে গেলেও তাদের মতো গ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষে করার কিছুই নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

খামারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমিন মহসিন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে ফসলি জমি কেটে অবাধে মাটি-বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব মাটি পরিবহনের ওভারলোড ট্রাকের কারণে গ্রামীণ পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের জানানোর পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দুয়েক দিন বন্ধ থাকলেও আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে চক্রটিকে। হয়তো বালুদস্যুদের খুঁটির জোর শক্ত। তাই প্রশাসনও নির্বিকার। কোনো বাধাই মানছেন তারা। অবাধে মাটি-বালু উত্তোলন করায় কৃষি জমি ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এ অবস্থায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই জনপ্রতিনিধি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটার কারণে উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। আর বালু উত্তোলন করা হলে ধ্বসে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়ে কৃষি জমি বিনষ্ট হয়। তাই যেকোনো মূল্যে কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। কারণ, কৃষি জমি কমে গেলে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলায় খাদ্যের সংকট দেখা দেবে। বিষয়টি সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ফসলি জমি কেটে মাটি-বালু উত্তোলন করার খবর পেয়েই একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। জরিমানাসহ বেশকয়েকটি খননযন্ত্রও জব্দ করা হয়েছে। এই অভিযান চলমান রয়েছে। এখানে অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে সেখান থেকে অবৈধ মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের জেল-জরিমানা দেওয়া হবে বলেও দাবি করেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এদিকে অভিযুক্ত লাভলু মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো অপরাধ করছেন না বলে দাবি করে বলেন, ফসলিতে পুকুর খনন তেমন দোষের কিছুই দেখছেন তিনি। এছাড়া ব্যবসা করা কোনো অবৈধ কাজ নয় বলেও মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত