কোরবানির পশুর হাট

সরবরাহ বাড়ায় কমেছে দাম

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে নওগাঁর খামারিদের। পশুর হাটে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। ক্রেতার তুলনায় হাটে পশু সরবরাহ বেশি থাকায় দাম তুলনামূলক কম। দামে ক্রেতাদের মধ্যে ফিরলেও অস্বস্থিতে খামারিরা। দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা খামারিদের। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৩৬টি পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি স্থায়ী ও ৯টি অস্থায়ী। জেলা বড় যে কয়টি পশুর হাট রয়েছে তার মধ্যে জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নে কোলা হাট। গত শুক্রবার কোলা ইউনিয়নে কোলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বসেছিল পশুর হাট। হাটে প্রচুর ষাঁড়, বলদ ও বকনা এবং ছাগলের সরবরাহ ছিল। দুপুরে পর মাঠটি পশুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যেন পা ফেলার মতো জায়গা ছিল না। গরমে ঘমাক্ত অবস্থায় একাকার। তারপরও মানুষ ঠেলে পশুর হাটে প্রবেশ করছে। দরদাম করছে এবং নিজেদের পছন্দের পশু কিনছে। মাঝারি আকারে ষাঁড় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বড় আকারে ষাঁড় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বকনা ৫০ হাজার ৯০ হাজার টাকা দাম।

এছাড়া ছাগল ১০ হাজার ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ হাটে গরু প্রায় ২ হাজার পিস এবং ছাগল প্রায় ১ হাজার পিস সরবরাহ হয়। হাটে পশুর সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম তুলনামূলক কম ছিল। এতে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্থি থাকলেও অস্বস্থিতে ছিলেন পশু পালনকারিরা। দানাদার জাতীয় খাবারের দাম বেশি হওয়ায় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করতে গিয়ে পশু উৎপাদনে খরচ বেশি পড়েছে।

বদলগাছী উপজেলার পরমানন্দপুর গ্রামের খামারি আব্দুল জলিল বলেন, তিন বছর আগে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ষাড় কিনেছিলাম। প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে লালন-পালন করেছি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় হাটে নিয়ে আসা। দাম রাখা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সেখানে ক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তিন বছর ধরে এত খরচ করে পালন করে আমার লাভটা কি হলো। দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি।

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আওয়ারগাড়ি গ্রামে খামারি সুজাউর রহমান বলেন, একটি ষাঁড় এবার বাড়িতে লালন-পালন করেছি। হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা। দাম রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম হাকছেন ১ লাখ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বড় আকারে গরুর দাম তুলনামুলক কম। মাঝারি বা ছোট আকারে গরু ক্রেতারা বেশি কিনছেন। আর হাটে ক্রেতার চেয়ে পশুর সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম তুলনামূলক কম। আমরা যারা খামারি প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে লালন-পালন করেছি তাদের লোকসান গুনতে হবে। তবে কিছুদিন আগেও পশুর দাম বেশি ছিল। ঈদ ঘনিয়ে আসায় দাম কমেছে।

সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের মিঠুন হোসেন বলেন, ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দিয়ে ষাঁড় কিনেছি।

এ গরুর দাম প্রায় দেড় লাখ হওয়া উচিত ছিল।

দাম কমে পাওয়ায় ক্রেতারাও কিনতে স্বস্থি পেয়েছে। বড় আকারে গরু ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে।

বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম থেকে হাটে গরু কিনতে আসছেন হারুন রশিদ দুলাল। তিনি বলেন, এ হাটে প্রতি বছরই কোরবানির সময় পশুর দাম কম হয়। আর সে আশায় এ হাটে আশা। ক্রেতার তুলনায় পশুর আমদানি বেশি। প্রচুর পশুর আমদানি হওয়ায় দাম তুলনামূলক কম। পছন্দমতো ক্রেতারা কিনতে পারছেন এবং স্বস্তি আছে বলা যায়।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে জেলায় ৩৩ হাজার খামারে প্রায় ৭ লাখ বিভিন্ন জাতের পশু লালন-পালন করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। জেলায় প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার পশু জবাই হবে।