মুখরিত কোরবানির হাট, বেচাকেনায় সন্তুষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতা

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বেচাকেনাও ভালোই হচ্ছে। বাজারে গরুর সরবরাহ ভালোই ছিল কিন্তু দাম না ছাড়ার কারণে এতদিন তেমন একটা বেচাকেনা হয়নি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পাবনা: পাবনায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত পশুর হাট। যেদিকেই চোখ যাবে নানা আকার ও রঙের পশু ও হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম হাটগুলোতে। পশুসমৃদ্ধ পাবনা জেলাতে চাহিদার তুলনায় প্রায় সারে ৩ লাখ কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। পাবনার ঐতিহ্যবাহী হাজিরহাট ও পুষ্পপাড়া হাটসহ প্রায় ৩৪টি হাটে এবার ব্যাপক পরিমাণ কোরবানির পশুর সমাগম হয়েছে। তবে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য এ বছর কোরবানির পশুর দামও একটু চড়া। দেশি ও উন্নত সঙ্কর জাতের গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল বিক্রি হচ্ছে হাটগুলোতে।

সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় মানুষের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের দেশেও পশু কোরবানি করে থাকেন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা। প্রতিবছর সারা দেশে যে পরিমাণ পশু কোরবানি হয় তার অনেকাংশের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে পাবনা জেলা থেকে। পূর্ব থেকেই এই জেলার পশু, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য সরবরাহ হয়ে আসছে সারা দেশে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান ও সরকারি ব্যবস্থায় এই অঞ্চলের কৃষকদের পশু লালন-পালনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাই তো দুধের চাহিদার সঙ্গে মাংস ও কোরবানির পশুর চাহিদাও মিটিয়ে আসছে পাবনা জেলার পশুর খামারিরা। তবে সম্প্রতি গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খরচের সঙ্গে পশুর দাম নির্ধারণে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। আবার ক্রেতারাও পড়েছে বেশ বিপাকে। বিগত বছরগুলোর চোয়ে এ বছর বারতি অর্থ দিয়ে পশু ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের। অপরদিকে খামারি ও ব্যাপারি বলছেন, যে দামে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে পশু ক্রয় করে হাটে আনছেন তার চেয়ে কম দাম বলছেন ক্রেতারা। তবে সারা দেশের সাধারণ ক্রেতাদের কাছে পাবনা জেলার দেশি জাতের কোরবানির পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

পশু ব্যাপারি ও খামারিরা জানান, প্রচুর পরিমাণ কোরবানির পশুর সমাগম রয়েছে হাটগুলোতে। গ্রাম অঞ্চল থেকে যে দামে গৃহস্থ থেকে পশু কিনে হাটে আনতে হচ্ছে তার চেয়ে কম দাম বলছে ক্রেতারা। তবু বিক্রি করতে হবে দামে মিল্লে বিক্রি করে দিচ্ছি। শহরের মানুষ পশু দুয়েকদিন আগে কিনে থাকে। তাই অনেকেই বিক্রি না করে হাটে হাটে ন্যায্যমূল্যের আশায় ঘুরছে। আবার অনেকেই অনলাইনে পশু কিনছেন। হাটে না এসে কৃষকের বাড়ি থেকে অথবা খামার থেকে পশু ক্রয় করছেন। তবে বিগত বছরের চাইতে পশু একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার মন হিসাব করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গো থাদ্যের কারণে এবারে পশুর দাম একটু বেশি।

ক্রেতারা জানায়, বিগত বছরের চাইতে এই বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা গরু প্রতি বেশি দাম। হাটে এতো পরিমাণ দালাল পশু কেনা মুসকিল। খামারি অথবা কৃষক গরু বা পশু বিক্রি করতে চাইলেও দালালরা দামবৃদ্ধি করে বাজার চড়া করে ফেলছে। তবু এর মধ্যে দামদর করে কিনতে হবে। তবে বিগত বছরের চেয়ে সব পশুর দাম বেশি।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, নিরাপত্তার জন্য এবারে হাটগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। হাটের দিনগুলোতে সাদা ও পোশাকি পুলিশ হাটের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সড়কে টহল পুলিশ বুদ্ধি করা হয়েছে। দিনরাত হাটে এবং সড়কে কাজ করছে পুলিশ। কোনো ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসেনি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন, প্রতিটি পশু হাটে ভ্যাটেরিনারি মেডিকেল টিম রয়েছে। জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারি ও ক্রেতারা আসছেন পাবনার হাটগুলোতে। বেচা বিক্রি বেশ ভালো। মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন পুলিশ। এবারে পাবনা জেলায় অসুস্থ পশু নেই বল্লেই চলে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরইমধ্যে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাটে বেপারি ও খামারিরা নিজ উদ্যোগে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে গেছেন। এবার পাবনা জেলায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে প্রায় দুই লাখ, ছাগল ৪ লাখ, মহিষ ১০ হাজার ও ভেড়া ৫০ হাজার। জেলাতে এই বছরে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু সারা দেশে সরবরাহ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর): রামগঞ্জে শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বেচাকেনাও ভালোই হচ্ছে। বাজারে গরুর সরবরাহ ভালোই ছিল কিন্তু দাম না ছাড়ার কারণে এতদিন তেমন একটা বেচাকেনা হয়নি। ক্রেতারাও ঘাপটি মেরে বসেছিল দাম কমার আশায়। শেষ মুহূর্ত এসে পড়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই একটু নড়েচড়ে বসেছে। তবে দেশি এবং মাঝারি ধরনের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ একটু বেশি, দামও কিছুটা সাশ্রয়ী।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ আর্থিক অসঙ্গতির কারণে অনেকেই এবার কোরবানি দিতে পারছে না। তাই বেচা-বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না বলে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান। উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এবার প্রচুর অস্থায়ী গরুর হাট বসেছে। উপজেলার একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট হলো রামগঞ্জ সোনাপুর বাজার। হাটের দিন ছাড়াও সেখানে গরু, ছাগল বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া অস্থায়ী বাজারগুলোতে এতদিন হাট না জমলেও এখন হাটগুলো খুব জমজমাট। হাটে ছোট বড়, মাঝারি সব ধরনের গরু-ছাগলই উঠেছে। ক্রেতারা যে যার সাধ্যমতো গরু-ছাগল কিনছে। এসব হাটে সর্বোচ্চ ৪ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা দামের গরু এবং ছাগল ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা দামের ছাগলই বেশি দেখা গেছে। গত সোমবার আথাকরার পঁচা মার্কেট, লক্ষ্মীধর পাড়া বাজার, নাগমুদ বাজার, ভাটরা বাজার, সোনাপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গরুর হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।