ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর

পদ্মা সেতু হওয়ায় বাড়ছে ব্যবসা

পদ্মা সেতু হওয়ায় বাড়ছে ব্যবসা

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বেড়েছে জেলার আমসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের চাপ। কলকাতা থেকে কম দূরত্বের হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে সম্ভাবনা। ভোমরা স্থলবন্দরকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন অনেকেই। এদিকে,পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সাতক্ষীরায় আমসহ পণ্য পরিবহনে সুবিধা এসেছে ব্যাপক। ফেরির ভোগান্তি কমেছে বলে নিশ্চিন্ত মনে আমসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য সারা দেশে পৌঁছে দিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতুর কারণে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসায় যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ-সড়কপথে সুন্দরবন’- এ স্লোগানটি আরো সহজ হয়েছে। দেশের যে কোনো স্থান থেকে পর্যটকরা সড়ক পথেই সুন্দরবন দেখতে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতি কর্মদিবসে প্রায় ১০০টি আমদানি ট্রাক বেশি ঢুকছে। আর ২০২২ সালের মে মাসে যেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা, অন্যদিকে চলতি সালের মে মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা।

আরো জানা যায়, কোলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিমি.। দূরত্ব বিবেচনায় বন্দরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও আরিচা ফেরিঘাটে যানজটের কারণে ব্যবসায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলতেন ব্যবসায়ীরা। তবে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমেছে ৬২ কিমি.। আর ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরে। ব্যবসায়ীদের অভিমত, পদ্মা সেতুর ফলে পাল্টে গেছে ভোমরা স্থলবন্দরের দৃশ্যপট।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আমরা যখন আম পাঠাতাম, তখন অনেক সময় আম পচে যেত। ফেলে দিয়ে আসতাম অনেক সময়। এখন মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় আমরা ঢাকায় আম নিয়ে যেতে পারছি।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, কলকাতা থেকে ভোমরার দূরত্ব কম। পদ্মা ব্রিজ হয়ে খুবই উপকার হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা মালামাল দেশের যে কোনো স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।

তবে ভোমরা স্থলবন্দরে কাস্টমস হাউজ না থাকায় ৭২টি পণ্যের অনুমোদন থাকলেও ২২ থেকে ২৫টি এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতুর পুরো সুফল পাচ্ছেন না, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সাতক্ষীরার অর্থনীতি আমূল বদলে গেছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাইলে তারা দিনের কাজ শেষ করে দিনে ফিরে আসতে পারছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মাছ অক্সিজেনের মাধ্যমে ঢাকাসহ পাশের জেলায় যাচ্ছে। আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পেঁয়াজ, আদাসহ কাঁচামাল ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৩ টন। পদ্মা সেতুর কারণে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এখানকার মাছ দিনের মধ্যে দেশের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছে দেয়া সহজ হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অঞ্চলে পর্যটক বেড়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। সড়ক পথে সুন্দরবন দেখার সবচেয়ে সহজ উপায় সাতক্ষীরা। যে কারণে মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি সুন্দরবন আসতে পারছেন। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু জানান, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের আশা ও উন্নয়নের প্রতীক। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদল হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব ও রপ্তানি বেড়েছে। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। তেলের দাম বাড়লেও সময় ভোগান্তি কমায় তা পুষিয়ে নিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত