ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া মালিক সেজে সাব-রেজিস্ট্রারের যোগসাজসে প্রায় শতাধিক সংখ্যা লঘু পরিবারের ৭৬ একরের অধিক জমি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, বাগমারা উপজেলার বাড়ীগ্রামের সরকার মো. মিজান এবং মোহনপুর উপজেলার খাঁড়ইল গ্রামের মামুন অর রশিদের নামে রেজিস্ট্রি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে লাহিড়ীহাট সাব-রেজিস্টার শফি আকরামুজ্জামানসহ আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের অনেকের নামে। এ ঘটনার পর থেকে জমির প্রকৃত মালিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরোজমিন গিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কোর্টপাড়া সীমান্ত। আর এ কোর্টপাড়া সীমান্তের, কোর্টপাড়া, গোয়ালপাড়া, আমতলা গ্রামের মৃত গনিরাম গনেশ, হেমানু পাল এবং ডোলরাম গণেশের ওয়ারিশরা দীর্ঘদিন ধরে মালিকানা জমি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ চক্র জমির মালিক সেজে এনআইডি ও ভুয়া কাগজ তৈরি করে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ৭৬ একরের অধিক সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায় এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী এক ইউপি সদস্যের দুই ছেলে, কেউ আবার সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, আবার পঞ্চগড় জেলার জাকের পার্টির এক নেতাও জড়িত আছেন এ ঘটনার সঙ্গে। অপর দিকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রির কাজে সহযোগিতাকারী মহড়ার (মুহুরী) কোনো সেরেস্তার দেখা মেলেনি, এমনকি বাড়িতে গিয়েও তাদের সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনার পর থেকে সবাই গাঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন তারা। আর জমির মালিকরা জমি রক্ষায় গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা হলেন পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মসজিদপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল হক প্রধান তোফায়েল, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঠকবস্তি পশ্চিম হরিনমারি গ্রামের শামসুল মেম্বারের ছেলে বকুল ইসলাম ও নাসিরুল ইসলাম, একই গ্রামের রহিম উদ্দীনের ছেলে শরিফ উদ্দীন শরিফ, রত্নাই বাঁশবাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলম, একই গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দীনের ছেলে মকবুল হোসেন, তারাঞ্জুবাড়ি গ্রামের পাগলার ছেলে কফিজুল ইসলাম বাবু, রত্নাই মারাধর গ্রামের মৃত দিনওলির ছেলে নজরুল ইসলাম, কোটপাড়া গ্রামের মৃত বুধু মহনের ছেলে ভবানী পাল ওরফে হেন্ডেলু, আমজানখোর গ্রামের মৃত কারুরাম সিংহের ছেলে ভারত চন্দ্র সিংহ, রত্নাই মারাধর গ্রামের মৃত শশধর পালের ছেলে যতিন পাল, সজনু পালের ছেলে শুরেষ পাল, কোটপাড়া গ্রামের ভবেশ পালের ছেলে কাজল পাল, রত্নাই গ্রামের মৃত দূর সিংহের ছেলে নরেন চন্দ্র সিংহ, রত্নাই মারাধর গ্রামের মৃত নিতাই পালের ছেলে গবিন চন্দ্র পাল, চিনিভিটা গ্রামের মৃত ভবানন্দ সিংহের ছেলে জগেন্দ্র নাথ সিংহ, কোর্টপাড়া গ্রামের কৃষ্ণপালের ছেলে বিকল পাল, বেলতলা কেরকেরুর ছেলে ধীরেন পাল, কেউলু মেম্বারের ছেলে সুবাহান পাল, মাখন পালের ছেলে অরুন পালসহ অনেকে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী যতেন পাল বলেন, আমরা রেকর্ডীয় সূত্রে জমির মালিক আমার ভোটার আইডি নকল করে কে বা কারা আমার জমি বিক্রি করে দিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। পরে দলিল তুলে দেখি সত্যি সত্যিই দলিল হয়েছে। আরেক ভুক্তভোগী শ্রী কানু রাম পাল বলেন, আমার মালিকানা জমি কে বা কারা বিক্রি করে দিয়েছে তা জানি না।