লবণপানির প্রভাব

হুমকিতে উপকূলীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

গত ৩০ বছর লবণ পানি এবং চিংড়ি চাষের বিরূপ প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তায় চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ৬০ প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। চরম হ্রাস পেয়েছে কৃষি উৎপাদন। গাছপালা না থাকায় পরিবেশের বিপর্যয়সহ হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। কর্মসংস্থানের অভাবে গত একদশকে কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেস হাজারো শ্রমজীবী। চিংড়িবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এক সময়ের কৃষি অধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরার নদনদীগুলোতে ষাটের দশকে তৎকালীন সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে এ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে। সবুজ গাছপালায় উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয় মিনি অরণ্য। প্রতিটি বাড়ির গোয়ালে ছিল গরু, গোলা ভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছ। এলাকার চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত খাদ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। কালের বিবর্তনে ৮০’র দশকে এ অঞ্চলের কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলন করলে শুরু হয় পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ। প্রথম দিকে ধান এবং মাছের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে এ অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি প্রভাবশালী ঘের মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং ঘের মালিকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় ধানচাষ বন্ধ করে জমিতে সারা বছর লবণ পানি ধরে রেখে শুধুমাত্র চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বর্তমানে উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা, আশাশুনিসহ প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদনদী ও পানি নিষ্কাশনের সরকারি খালগুলো বাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষের ফলে পলি পড়ে অধিকাংশ নদ-নদী ও খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক বলেন, বছরের পর বছর উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজমি লবণ পানিতে তলিয়ে রাখায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ফসলের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাবে। শ্যামনগর সিনিয়িার মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, গত তিন দশকে লবণ পানির প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ। এ অঞ্চলের চিংড়ি ঘেরগুলো সনাতন পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পেয়েছে এবং পচনশীল বস্তু মাটিতে মিশে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।