এখনো সুবিধাবঞ্চিত দহগ্রামবাসী

* ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক বসেন না * দহগ্রাম এলাকায় ১৩০টি পরিবারের গুচ্ছগ্রাম থাকলেও সেখানে মাত্র ৫০টি পরিবার অবস্থান করছে।

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

দীর্ঘদিন ভারত কর্তৃক অবরুদ্ধ থাকার পর ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ‘তিনবিঘা করিডোর’ শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় বিলুপ্ত ছিটমহল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। তবে এখানকার মানুষ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা এলাকা দুটি ১৯৯২ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিমতে পঞ্চগড়ের বেরুবাড়ী ছিটমহলের বিনিময় তিনবিঘার ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য প্যাসেজ ডোর হিসেবে করিডোর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এখানকার মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর ২৬ জুন তিনবিঘা করিডোর মুক্ত দিবস পালন করে আসছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ ভূখণ্ডের মানুষ। ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক বসেন না। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। দখল সূত্রে স্থানীয়রা এখানকার জমির মালিক। তবে জমিগুলো রেকর্ডভুক্ত না হওয়ায় একচ্ছত্র অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না তারা। অনেক রাস্তাঘাট কাঁচা রয়েছে। এতে বর্ষাকালে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পাঁচ বছর আগে বন্যায় সেতু ভেঙে গেলেও তা মেরামতের উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই সেতু পার হচ্ছেন শত শত মানুষ। দহগ্রাম এলাকায় ১৩০টি পরিবারের গুচ্ছগ্রাম থাকলেও সেখানে মাত্র ৫০টি পরিবার অবস্থান করছে। টিনশেড ঘরগুলোতে থাকার অনুপযোগী। তাই ধীরে ধীরে গুচ্ছগ্রাম ছাড়ছে সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের পর ভারতের অভ্যন্তরে ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়ে। পরে ১৭৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮৫ মিটার প্রস্থের তিনবিঘার জমিটুকু ৯৯ বছরের চুক্তিতে ভারত সরকার লিজ দেয় বাংলাদেশকে। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন রেশনিং পদ্ধতিতে ‘তিনবিঘা করিডোর’ এক ঘণ্টা পরপর দিনে ৬ ঘণ্টা খোলা রাখা শুরু হয়। তখন কিছুটা হলেও মুক্তির স্বাদ পান দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ভূখণ্ডের ২০ হাজার মানুষ। ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আরো ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোর গেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ৪ সেপ্টেম্বর তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে গেটটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম সফরের মধ্যদিয়ে তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। দহগ্রামে চর সৈয়দ পাড়া গ্রামের কুরফান আলী বলেন, আমরা মুক্ত হয়েও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। এলাকার অনেক রাস্তাঘাট পাকা হয়নি। বর্ষায় আমরা কষ্ট করে চলাচল করছি। এছাড়া চেকিং ভোগান্তি তো রয়েছেই। দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, বিক্রির জন্য প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৬০টি গরু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় বিএসএফ। আমরা নির্ধারিত সময় গরু বিক্রি করতে পারি না। এ এলাকায় খামারও করতে পারি না। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।

দহগ্রাম ইউনিয়নের মহিনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তাহেদার আলী বলেন, পাঁচ বছর আগে বন্যায় সেতুটি ভেঙে গেছে। দিন যায় বছর যায় কিন্তু সেতুটি আর মেরামত হয় না। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন সেতুটি পার হতে হয়। এ বিষয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ সরকার দহগ্রামবাসীর জন্য অনেক কিছু করেছে। তবে আমরা এখনো অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতি সপ্তাহে বিক্রির জন্য তিনবিঘা দিয়ে ৬০টি বেশি গরু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না বিএসএফ। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম ও সেতুর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।