ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাঙ্গাইলে নদীতে বাড়ছে পানি

ভাঙছে বাড়ি-ফসলি জমি
টাঙ্গাইলে নদীতে বাড়ছে পানি

টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন যমুনার পানি ১-৩ মিলিমিটার করে কমতে থাকলেও গত রোববার থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে জেলার ধলেশ্বরী, নিউ ধলেশ্বরী, বংশাই, ঝিনাই, ফটিকজানী, পৌলী, এলেংজানীসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকাল ৯টা থেকে গত সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনার পানি পোড়াবাড়ী পয়েণ্টে ০.০৩ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েণ্টে ০.০৮ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ২৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েণ্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৬ মিটার, ঝিনাই নদীর জোকারচর পয়েণ্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৬ মিটার, ফটিকজানী নদীর নলছোপা পয়েণ্টে ০.০১ মিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ১২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি বাড়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে মির্জাপুরের ফতেপুর ইউনিয়নে ঝিনাই (স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষায় বউমরা) ও বংশাই নদীর তীব্র ভাঙনে বাজার, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটিও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে নদী তীরবর্তী মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, ভাঙনের ফলে গত কয়েক বছরে ফতেপুর ইউনিয়নের এলাকার একটি মন্দিরসহ ২০০ একর জমি ও দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

পানি বেড়ে যাওয়ায় মির্জাপুরের একাব্বর হোসেন সেতু, চাকলেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়, থলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাখালী বাজার ঝুঁকিতে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাই নদীর বাদ্যকর পাড়া, হিলড়া, থলপাড়া, ফতেপুর বাজার, কাটাখালী বাজার, চাকলেশ্বর এবং বংশাই নদীর গোড়াইল, ত্রিমোহন, কুমারজানী ও দেওহাটা এলাকায় ভাঙন চলছে। এরমধ্যে ঝিনাই নদীর ফতেপুর ও থলপাড়া এবং বংশাই নদীর গোড়াইল ও কুমারজানীতে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। মির্জাপুরের কুর্নী-ফতেপুর সড়কের ফতেপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩০০ ফুট পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। কাটাখালী বাজারের পূর্ব পাশের বাসিন্দা তায়েব হোসেন জানান, গত বছর ভাঙনের কারণে সেখানে থাকা তিনটি খুঁটির মধ্যে একটি ঝিনাই নদীতে পড়ে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুতের তিনটি ট্র্যান্সফরমারসহ আরো কয়েকটি খুঁটি ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই খুঁটি বা তার নদীতে পড়ে গেলে থলপাড়া, ফতেপুর, সুতানড়ী, পারদিঘি, হিলড়া, আদাবাড়িসহ আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। স্থানীয়রা জানায়, নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু তোলা হয়। বর্ষার শুরুতে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষার্থী তপু চন্দ্র দাস, সুজন চন্দ্র দাস, হরিমোহন দাসসহ এলাকার অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার ও ভেকু) দিয়ে বালু তোলা হয়। এ কারণে অনেকের বসতভিটা নদীর পেটে চলে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য তারা অনেকের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তারা জানায়, নদীর ভাঙনে গত তিন বছরে এলাকার কমপক্ষে ৭৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। অন্তত ২৫ একর জমি নদীর পেটে গেছে। ওই এলাকায় বিদ্যুতের একটি খুঁটি, মন্দির, বসতঘর, পামওয়েলসহ বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ, আবাদি জমি ঝুঁকিতে রয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বাড়তে থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বেশি ভাঙন এলাকা চিহ্নিত করেছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত