ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০ বছরের সূর্যপুরী আমগাছ

ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০ বছরের সূর্যপুরী আমগাছ

তিন বিঘা জমির ওপর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ছে ঠাকুরগাঁওয়ের দুইশ’ বছরের প্রাচীন সূর্যপুরী আম গাছ। আম গাছটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারীর নয়াপাড়া গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন উৎসুক দর্শনার্থী। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেউ কেউ গাছটির আম কিনছেন। ঈদের তৃতীয় দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়েছিলাম ঢাকা পোস্টের রংপুর বিভাগের সংবাদ যোদ্ধারা। এ ঈদ ভ্রমণে আমাদের সাথে সঙ্গী হয়েছিলেন ঢাকা পোস্টের বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ ভাই। একই সঙ্গে এটিএন নিউজের এম এ সামাদ ও সহকর্মী আরিফ হাসান। রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বড় মাঠ ও ডাকবাংলোতে আড্ডা জমকালো আড্ডা হয়ে গেল আমাদের। সে আড্ডায় গতিশীল কাজের দিকনির্দেশনা, সংবাদ চর্চা, অফিস ডেস্কসহ সাংবাদিকতার বহু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন সোহাগ ভাই। পরের দিন দুপুরে আমরা চলে গেলাম এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আম গাছটি দেখতে। দর্শনীয় স্থান সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্ত হলেন মাহাবুর আলম সোহাগ, এম এ সামাদ, রবিউল এহসান রিপন ভাইসহ রংপুর বিভাগের বিভাগীয় ব্যুরো চিফ ফরহাদুজ্জামান ফারুক, লালমনিরহাটের নিয়াজ আহমেদ শিপন, গাইবান্ধার রিপন আকন্দ, নীলফামারীর শরিফুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিপন তালুকদার, ঠাকুরগাঁওয়ের আরিফ হাসান ও পঞ্চগড়ের এসকে দোয়েল। প্রায় আধা ঘণ্টা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর সর্পিল পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম ঐতিহাসিক সেই আমগাছটিতে। বিভিন্ন বয়সি অগণিত পর্যটকে মুখরিত গাছটির চারপাশ। ২০ টাকা টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করছে দর্শনার্থীরা। আমরাও সে গেট দিয়ে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম বিশাল সে আম গাছ। এ আম গাছ দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখছি, আর জানলাম গাছটির ইতিহাস। উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল এই আম গাছটির মালিক সাইদুর রহমান ও নুর ইসলাম। তারা জানালেন, গাছটির বয়স আনুমানিক ২২০ বছরের মতো। উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ২০টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা সূর্যপুরী আম গাছটি আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আরও জানান, গাছটিতে এখনো প্রচুর আম ধরে। ১০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত আম পাওয়া যায় এ গাছ থেকে। প্রতি বছর এ আম বিক্রি করে আয় হয় কমপক্ষে ১ থেকে ২ লাখ টাকা। যারা এই আম গাছ দেখতে আসেন, তারাই আম কিনে নিয়ে যান। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দেখতে আসে। গাছটি দেখতে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনপ্রতি ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে গাছটির পরিচর্যাসহ সার্বিক উন্নয়নের কাজ করা হয়। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে এই গাছটিকে ঘিরে একটি পিকনিক স্পট করা সম্ভব বলে জানান তিনি। গাইবান্ধার রিপন আকন্দ জানান, এত বড় আম গাছ জানা ছিল না। ঠাকুরগাঁওয়ে সফর এসে গাছটি দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। বিশাল এলাকাজুড়ে বহু শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখে খুব ভালো লাগল। গাছটি ঘিরে এ এলাকায় পর্যটন গ্রাম হয়ে উঠেছে। এটিএন নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি এম এ সামাদ জানান, আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলায় অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ সূর্যপুরী আমগাছটি ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আম সূর্যপুরী। এর চাহিদা রয়েছে পুরো দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আঁটি সূর্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফরহাদুজ্জামান ফারুক বলেন, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঠাকুরগাঁওয়ের এ বৃহৎ সূর্যপুরী আমগাছটির কথা জেনেছি। আজ ঠাকুরগাঁওয়ে ঢাকা পোস্টের রংপুর বিভাগীয় টিম সফরে আসার সুবাদে গাছটি দেখার সৌভাগ্য হলো। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এ গাছটি ঘিরে এখানে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটক তৈরি হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আম গাছ হিসেবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক গাছটি দেখতে এখানে ভিড় করছেন। তাই সরকারিভাবে এখানে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হলে এলাকাটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। মাহাবুব আলম সোহাগ জানান, কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকি। এলাকায় এলেও সময় মেলে না। তবুও যেটুকু সময় মেলে সুযোগ পেলেই গাছটিকে দেখতে এখানে ছুটে আসি। ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্য সূর্যপুরী এ আম গাছ। এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গাছ বলে মনে করা হয়। ঠাকুরগাঁওবাসী হিসেবে আমরা গাছটির জন্য গর্বিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত