ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাতক্ষীরায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর বেশি

সাতক্ষীরায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর বেশি

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ফিংড়ি ইউনিয়নের উত্তর গাভা গ্রামের প্রায় ৭০টি পরিবার। এ গ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস মুড়ি তৈরি করা। এ কারণে উত্তর গাভা এখন মুড়ি গ্রাম নামে পরিচিত। এ সময়ে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করছে। মুড়ির চাহিদা সারা বছর থাকলেও রোজার সময়ে উৎপাদন ও চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় বহুগুণ। স্বাদে অনন্য হওয়ার বাড়ছে হাতে ভাজা মুড়ির কদর। তবে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় মুড়ি ভাজার কাজ। চলতে থাকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। মুড়ি ভাজার কাজে মহিলাদের সহযোগিতা করে বাড়ির পুরুষরা। প্রথমে শুরু হয় চুলায় আগুন জ্বালানো, তারপর মাটির পাত্রে বালু গরম করা, মুড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের চাউলের সঙ্গে লবণ পানির মিশ্রন ঘটিয়ে গরম করে বালুর পাত্রে ঢেলে নাড়াচাড়া করলেই কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে তৈরি হয়ে উঠে মুড়ি। এ সব মুড়ি প্যাকেট করে সাতক্ষীরা জেলার বড় বড় মোকামে পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাদে অনন্য হওয়ায় বাড়ছে হাতে ভাজা মুড়ির কদর। তবে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। উত্তর গাভা গ্রামের রঘুনাথ দাশ বলেন, বাপ দাদার পেশা সেখান থেকে আমরা এই পেশায় জড়িয়ে ররেছি। মুড়ি ভাজার উপরে নির্ভর করে পরিবার চলে। রোজার মাসে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ কেজি চাউলের মুড়ি বিক্রয় হলেও। অন্য সময়ে নেমে আসে অর্ধেকে। তিনি আরও বলেন, আগে এক বস্তা মুড়িতে ৫ থেকে ৬ শত টাকা লাভ হলেও বর্তমানে চাউল ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২ থেকে ৩ শত টাকাতে। এতে দুজন মানুষের পারিশ্রমিক ওঠে না! বর্তমানে বাজারও ভালো না। একই গ্রামের চারু দাশ ও ভারতী রানী দাশ বলেন, বাপ-দাদার পেশা ছোট থেকে আমরাও তাই করে যাচ্ছি। ১ বস্তা চাউলের মুড়ি ভেজে সব খরচ বাদ দিয়ে ২ থেকে ৩ শত টাকা থাকে। সেটি বর্তমান সময়ে একেবারে অল্প। ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের খরচ বাড়ছে, তবে সেই তুলনায় বাড়েনি মুড়ির দাম। আমাদের এই শিল্প বাঁচাতে চাউলের দাম কমানোর বিকল্প নেই। তারা আরো বলেন, এলাকার প্রতিটা বাড়ির মহিলার স্বামীর সঙ্গে মুড়ি তৈরির কাজে সহযোগিতা করি। তারপর সংসারের যাবতীয় কাজ করি। হাতে তৈরি মুড়ি খেতে সুস্বাদু। একই পাড়ার নিরান দাস বলেন, ছোটবেলা থেকে মুড়ি তৈরি ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখেনি। তবে যতদিন বাঁচব এই কাজ করে যেতে হবে। আমাদের হাতে তৈরি মুড়ির বেশ সুনাম রয়েছে। কিন্তু মেশিনে তৈরি ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি অসাধু ব্যবয়াসীরা সাধারণ মানুষের কাছে হাতে ভাজা গাভার মুড়ি বলে বিক্রয় করে। তিনি আরো বলেন, যেটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর যারা নকল করে তাদের শাস্তি দাবি করছি। সরকারে কাছে দাবি করছি মুড়ি তৈরির চাউলের দাম কমাতে। সাতক্ষীরার বিসিকের উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, সদর উপজেলা গাভা গ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প গড়ে উঠেছে, সেই পাকিস্তান আমল থেকে। এখানে প্রায় ১০০ পরিবার হাতে ভাড়া মুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত